২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করলে বাঁচবে ১১ হাজার কোটি টাকা

‘বুয়েট রুফটপ সোলার প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় সৌরচুল্লি বসানো হচ্ছেছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশে বিভিন্ন ভবনের ছাদ ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ শুরু হয়েছে। এটি এখনো তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। তবে ছাদ ব্যবহার করে ২ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব। আর এটি করা গেলে বছরে ১১ হাজার ৩২ কোটি টাকা (১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) সাশ্রয় করতে পারবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।

এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)। আজ সোমবার সন্ধ্যায় অনলাইনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও এর সরবরাহ ব্যাহত হয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনের অর্থনৈতিক সুবিধা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

আইইইএফএ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং ফার্নেস অয়েল ও ডিজেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার কারণেই প্রতিবছর উচ্চ মাত্রার রাজস্ব ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে পিডিবি। তাদের এ খরচ কমাতে পারে ছাদে স্থাপিত সৌরবিদ্যুৎ।

গবেষণাপত্রের লেখক ও বাংলাদেশের জ্বালানি খাত বিষয়ক আইইইএফএর প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে গত দুই বছরে একটা লম্বা সময় দিনের বেলায়ও তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যবহার করা হয়েছে। ফার্নেস অয়েলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ১৮ টাকা আর ডিজেলে ৩৯ টাকা। এর বদলে দিনের বেলায় ছাদের সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করে বিপুল সাশ্রয়ের হিসাবটি বের করা হয়েছে গবেষণায়।

আইইইএফএর নির্বাচিত বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটিতে ছাদে সৌরবিদ্যুতের ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে ছয়টি মূল চালিকা শক্তিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো সচেতনতা বৃদ্ধি করা, অর্থায়ন সহজ করা, নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রণ-সংক্রান্ত বিষয়ে পরিবর্তন আনা, গুণগত মান নিশ্চিত করা, ইউটিলিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বিজনেস মডেল অনুসরণ করা এবং মূল অংশীজনদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

শফিকুল আলম আরও বলেন, বিনিয়োগকারীরা সুদের হার, নেট মিটারিং নির্দেশিকা এবং নীতি পরিবর্তন-সম্পর্কিত তথ্য দ্রুত সংগ্রহ করতে চান। কিন্তু এ খাতে তথ্যসম্পর্কিত অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। ছাদে সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহারের আরেকটি প্রধান বাধা হলো পর্যাপ্ত লোকবল না থাকা, গুণগতমান নিশ্চিতকরণ এবং প্রকল্প মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সক্ষমতার অভাব। এ জন্য টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচির জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারে।

ছাদে ২ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতার সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব বলে আইইইএফএর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে
ছবি: আইইইএফএ
আরও পড়ুন

গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ পুনঃ অর্থায়ন স্কিমটি সবচেয়ে সাশ্রয়ী, যা থেকে ভবনের ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বল্প সুদে পুনঃ অর্থায়ন পাওয়া সম্ভব। কিন্তু এই তহবিলের আকার মাত্র ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরও ৬৯টি পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতার করতে হয়। ফলে ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে পুনঃ অর্থায়ন পাওয়া সম্ভব নয়।

ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেডও (ইডকল) ছাদে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনে অর্থায়ন করে, তবে তা এই খাতের মোট চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। স্থানীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অদূর ভবিষ্যতে এ খাতের ঋণের চাহিদা পূরণে বহুপক্ষীয় সংস্থা, আন্তর্জাতিক জলবায়ু অর্থায়ন এবং স্থানীয় বন্ড বাজারের সুযোগ নিতে পারে।

আরও পড়ুন

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ খাতে ব্যবহৃত সোলার প্যানেল এবং চারটি আনুষঙ্গিক উপকরণের (অ্যাকসেসরিজ) ওপর আরোপিত আমদানি শুল্ক ১১ দশমিক ২ থেকে ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এই খাতে প্রণোদনা হিসেবে উচ্চ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা উচিত। এ ছাড়া একটি নির্দিষ্ট ভবনের ছাদে অনুমোদিত লোডের (ওয়াট/কিলোওয়াট/মেগাওয়াট) সমপরিমাণ সক্ষমতার সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনে যেন অনুমতি প্রদান করা হয়।

ছাদে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপন জনপ্রিয় করতে বিদ্যুৎ বিতরণ সেবার কোম্পানিগুলো যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তা-ও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, বিজনেস মডেল অনুসরণ করে, বিদ্যুৎ সেবাদানকারী সংস্থা বা কোম্পানিগুলো প্রকল্পের সংখ্যা যেমন বাড়াতে পারে, তেমনি রাজস্ব বাড়াতে পারে।

বিদ্যুৎ সেবাদানকারী সংস্থা বা কোম্পানিগুলো তাদের অঞ্চলের ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের পুরো সম্ভাবনা একত্র করতে পারে এবং এভাবে দেশের সামগ্রিক ছাদভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের বাজারের আকার নির্ণয় করা সম্ভব। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এ খাতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের প্রয়োজন সম্পর্কে ধারণা পাবে বলেও বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আরও পড়ুন