আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি

‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র–জনতার’ প্রতিবাদ সমাবেশ। রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৮ জানুয়ারিছবি: দীপু মালাকার

সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি ও ‘সংক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার’ ওপর পুলিশের হামলার বিচারের দাবিও জানানো হয় প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন। তিনি বলেন,  ‘আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়েছি এ ধরনের তাণ্ডবলীলা দেখার জন্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, আদিবাসীদের ওপর এমন হামলার বিচার তো করতেই হবে, সেই সঙ্গে সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে তাদের স্বীকৃতিও দিতে হবে। এ বিষয়ে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার আহ্বানও জানান তিনি।

জোবাইদা নাসরীন আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও জনমুখী হতে হবে। একটি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এই সরকারের জন্ম হয়েছে, তাই সরকারকে সব বিষয়েই জবাবদিহি করতে হবে।

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক অলিউর সান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের আদিবাসী সনদে অধিকাংশ দেশ স্বাক্ষর করেছে। যারা বিরোধিতা করেছে, তারা ‘সাদা চামড়ার লোক’ আর আদিবাসীদের ভূমি দখল করেছে। আগে তাদের ভূমি ফিরিয়ে দেন। ‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্র-জনতা’র ওপর হামলার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন, গত পনেরো বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা যেভাবে আন্দোলন দমন করেছেন, অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তারাও একই ধরনের পথ বেছে নিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব জাতিসত্তার মানুষের সাংবিধানিক স্বীকৃতি চাই এবং সরকারকে দুটি হামলার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাই।’

সমাবেশে হাইকোর্টের আইনজীবী নিকোলাস চাকমা বলেন, ‘আমরা আদিবাসী স্বীকৃতি চাচ্ছি বলে আমাদের বলা হচ্ছে বিচ্ছিন্নতাবাদী। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সামনে হামলার বিষয়ে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে সুস্পষ্ট বক্তব্য চাই।’ তিনি বলেন,  ‘সংবিধানে আদিবাসী হিসেবে আমাদের অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে।’

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলীক মৃ বলেন, ‘আমরা অধিকারের জন্য অনেক রক্ত দিয়েছি, অথচ তারা আমাদের ধ্বংস করতে চায়।’ ১৫ জানুয়ারির হামলায় ২১ জন আহত হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, যার নেতৃত্বে আক্রমণ হয়েছে, সে এখনো বিভিন্ন মিডিয়ায় টকশো করে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘দাবি মেনে নেওয়া না হলে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যাব।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কোষাধ্যক্ষ মেন্টিন প্রমীলা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, হাজং স্টুডেন্টস কাউন্সিলের সদস্য সচিব নাইম হাজংসহ অনেকে।  

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অলীক মৃ ও সঞ্চালনা করেন নু মং প্রু মারমা।