পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বয়কসহ সাত শিক্ষার্থী অনশনে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদসহ সাত শিক্ষার্থী অনশন শুরু করেছেন। আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এ কর্মসূচি শুরু হয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অনশনকারীরা।
অনশন কর্মসূচিতে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন জুলাই আন্দোলনে গুলিতে এক চোখ হারানো বাংলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ শুভ হোসেন, ইতিহাস বিভাগের একই বর্ষের রাশেদ দিনার, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের একই বর্ষের তানিম মুশফিক, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সাইদুল রহমান, রাজনীতিবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ হিমেল খান এবং বাংলা বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের সৌরভ সরকার।
অনশনকারী শিক্ষার্থীরা পোষ্য কোটা বাতিলের দাবির পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবি করছেন। এ ছাড়া ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলনের’ দাবি অনুযায়ী আবেদন ফি কমানো, অযৌক্তিক কোটা বাতিল, চাকসু নির্বাচন দেওয়াসহ ৯ দাবির সঙ্গেও সংহতি জানিয়েছেন।
আজ দুপুর ১২টা থেকে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রশাসনিক ভবনের সামনে জড়ো হন। পরে খান তালাত মাহমুদসহ পাঁচ শিক্ষার্থী সেখানে প্রথমে অনশন শুরু করেন। পরে বিকেল চারটার দিকে আরও দুই শিক্ষার্থী অনশনে যোগ দেন। এ সময় কিছু শিক্ষার্থীকে অনশনে সংহতি জানিয়ে সেখানে অবস্থান করতে দেখা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার কার্যালয় রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা এসে অনশনকারীদের আশ্বাস দিলেও তাঁরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন। অনশনকারীদের দাবি, পোষ্য কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের অনশন চলবে।
জানতে চাইলে অনশনে অংশ নেওয়া মোহাম্মদ শুভ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোষ্য কোটা বাতিলের লিখিত আদেশ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে। ধীরে ধীরে এই অনশনে আরও শিক্ষার্থী যুক্ত হবেন। কারণ, শিক্ষার্থীদের কেউই ক্যাম্পাসে বৈষম্যমূলক কোটা চান না। কোটার নামে প্রহসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পোষ্য কোটা বাতিলের আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ২৯ ডিসেম্বর। ওই দিন শিক্ষার্থীরা এই কোটা বাতিল, আবেদন ফি কমানো, চাকসু নির্বাচন দেওয়াসহ ৯ দাবিতে মানববন্ধন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে এ কর্মসূচি হয়।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে প্রশাসন দাবি না মানায় গত রোববার আবার আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। পরের দিন সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নিয়ে আবার বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে কর্তৃপক্ষ পোষ্য কোটা বাতিল না করে কমানোর প্রস্তাব করে। পরে ছাত্রসংগঠনের প্রতিনিধিরা এতে সম্মতি দেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে গতকাল মঙ্গলবার থেকে আবার আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ।
শিক্ষার্থীদের অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।’