বায়ুমান সূচক ২০২০
শীর্ষ দূষিত ১০০ শহরের মধ্যে বাংলাদেশের ৪টি
আইকিউএয়ারের বায়ুমান সূচক অনুযায়ী মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ঢাকার আজিমপুর ও গাজীপুরের শ্রীপুরের অবস্থান যথাক্রমে ১৬, ২৩, ৬০ ও ৬১ নম্বরে।
শীর্ষ ১০০ দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ৯৪টিই ভারত, চীন ও পাকিস্তানের।
৪৬টি শহর নিয়ে ভারত রয়েছে তালিকার প্রথমে।
৪২টি শহর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন।
বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের ১৬ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ। এ ছাড়া দেশের আরও তিনটি শহর ও এলাকা রয়েছে ২০২০ সালের শীর্ষ ১০০ দূষিত শহরের মধ্যে। এগুলো হলো ঢাকা, ঢাকার আজিমপুর ও গাজীপুরের শ্রীপুর। এগুলোর অবস্থান যথাক্রমে ২৩, ৬০ ও ৬১ নম্বরে।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইকিউএয়ার বায়ুমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্ক এ চিত্র তুলে ধরেছে। গত সোমবার আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ কথা জানায়।
আইকিউএয়ার বায়ুর মান বৃদ্ধিতে সহায়ক প্রযুক্তিপণ্য নির্মাণ করে থাকে। একই সঙ্গে তারা বিশ্বব্যাপী বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে। সে অনুযায়ী প্রতিবছর বায়ুমান সূচক প্রকাশ করে। আইকিউএয়ারের বায়ুমান সূচক অনুযায়ী সবচেয়ে দূষিত ১০০ শহরের মধ্যে ৪৬টিই ভারতের। এরপর ৪২টি শহর নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানের দূষিত শহরের সংখ্যা ছয়। আর ৪টি দূষিত শহর বা অঞ্চল নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে।
আইকিউএয়ার বলছে, ২০২০ সালের শীর্ষ ১০ দূষিত শহরের ৯টিই ভারতের। সবচেয়ে দূষিত শহর চীনের জিনজিয়াংয়ের হোতান।
কোন অঞ্চলের বায়ু কতটা দূষিত তা নির্ধারণ করা হয় পিএম ২.৫, পিএম ১০, ওজোন, নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড, সালফার ডাই–অক্সাইড এবং কার্বন মনো–অক্সাইডের মাত্রার ওপর। বায়ুদূষণের উপাদান অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা (পিএম) মানবশরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর মাত্রা ১২–এর নিচে হলে তা ক্ষতিকর নয় বলে বিবেচনা করা হয়। ৫৫ থেকে ১৫০ মাত্রাকে অস্বাস্থ্যকর এবং ২৫০ এর বেশি মাত্রাকে বিপজ্জনক বলা হয়ে থাকে।
আইকিউএয়ারের ২০২০ সালের বায়ুমান সূচক অনুযায়ী মানিকগঞ্জের গড় পিএম ছিল ৮০.২। ঢাকায় যা ছিল ৭৭.১ এবং ঢাকার আজিমপুর ও গাজীপুরের শ্রীপুরে ছিল ৫৫.৭। অর্থাৎ বাংলাদেশের চারটি শহর বা অঞ্চলের বায়ুদূষণের মাত্রা ছিল অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে। অন্যদিকে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর চীনের হোতানে এর গড় মাত্রা ছিল ১১০.২।
আইকিউএয়ার বলছে, শীর্ষ ১০টি দূষিত শহরের মধ্যে ভারতের ৯টি শহর হলো গাজিয়াবাদ, বুলন্দশহর, বিসরাখ জালালপুর, ভিবাদি, নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, কানপুর, লক্ষ্ণৌ ও দিল্লি। এ শহরগুলোর অবস্থান যথাক্রমে ২ থেকে ১০ নম্বরে।
চিকিৎসাবিষয়ক সাময়িকী ল্যানসেটের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে ১৭ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ ছিল বায়ুদূষণ। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, দেশটিতে প্রতিবছরই আতশবাজি পোড়ানোর ওপর ভারত সরকার অথবা দেশটির সুপ্রিম কোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তবে এ নিষেধাজ্ঞা তেমন একটা মানা হয় না। এ বছরের দেওয়ালি উৎসবেও নিষেধাজ্ঞা না মেনে দিল্লিতে ব্যাপক আতশবাজি ফোটানো হয়। এ অবস্থায় ৫ নভেম্বর দিল্লিতে বায়ুদূষণ ছিল চরমে। বায়ুমান সূচক অনুযায়ী চলতি বছরের সবচেয়ে খারাপ দিন পার করেছে ভারতের রাজধানী শহরটি। সেদিন সেখানে বায়ুদূষণের মাত্রার সূচক ছিল পিএম ৪৫১। আতশবাজি পোড়ানো ছাড়াও বছরের এ সময়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা জমির ফসলের অবশিষ্টাংশ জমিতে পুড়িয়ে থাকেন। এ দুটি রাজ্য দিল্লির লাগোয়া। ফলে তা দিল্লির বায়ুদূষণ পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে ঠেলে দেয়। গত সপ্তাহে দুই কোটি মানুষের শহর দিল্লির সব স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
দূষণ নিয়ে ভারতের সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের বিশ্লেষক সুনীল দাহিয়া বলেন, আতশবাজি পোড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তেমন কাজে আসেনি বলেই দেখা যাচ্ছে। বায়ুদূষণের অন্য উৎসের পাশাপাশি আতশবাজি পোড়ানো বিপজ্জনক মাত্রায় দূষণ ডেকে এনেছে।
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভারত সরকারের বিরুদ্ধে। তবে ভারত ও চীন সরকার তাদের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরগুলোতে স্মগ টাওয়ার বসিয়ে দূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর দুটি স্মগ টাওয়ার বসানো হয়েছে দিল্লিতে। স্মগ টাওয়ার তার এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যকার বায়ু থেকে পিএম ২.৫–এর মাত্রা অর্ধেক কমিয়ে দেয়। যদিও এর কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। ডব্লিউএইচওর নির্ধারণ করা দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া এলাকায় বাস করে বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ। বায়ুদূষণের সঙ্গে হাঁপানি, ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের সম্পর্ক রয়েছে।