শিশিরভেজা লতা পারুল

লতা পারুলের ছবিটি গত ১৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের কাচারিঘাটের খান মোহাম্মদ আলী নার্সারি থেকে তোলাছবি: লেখক

সকালবেলা ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্রতীরের সাজানো-গোছানো জয়নুল উদ্যানে হাঁটতে যাই প্রতিদিন। কাচারীঘাট এলাকার একটি নার্সারির পাশ দিয়ে বাসায় ফিরি প্রায়ই। সম্প্রতি যাওয়ার পথে একদিন সেখানে লতাপারুলের সাদাটে-বেগুনি ফুলের দিকে চোখ আটকে গেল। ছবি তুলে ফেললাম ঝটপট। শিশিরভেজা ফুল তার স্নিগ্ধ সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দিল। লতা পারুল হেমন্তে ফুটলেও শীতেও প্রস্ফুটন অব্যাহত থাকে।

লতা পারুলের আদি নিবাস দক্ষিণ আমেরিকা হলেও বর্তমানে আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খুব ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছে। এদের পাতা উজ্জ্বল সবুজ রঙের। পাতা কচলালে রসুনের মতো গন্ধ ছড়ায়। পাতায় রসুনের গন্ধ থাকায় এদের রসুন্ধি লতা নামেও ডাকা হয়। কলমে ও শিকড় থেকে চারা গজায়। অন্য কোনো গাছ বা মাচায় আশ্রয় নিয়ে ঝোপাকৃতি হয়ে ওঠে। ফটকের ওপরে চমৎকার হয়। এরা দ্রুতবর্ধনশীল লতা। গাছে কোনো কাঁটা নেই।

লতা পারুল শোভাবর্ধক, চিরহরিৎ, কাষ্ঠল, শক্ত, লতানো গুল্ম। হেমন্তে প্রকৃতিতে ফুলের সংখ্যা কম। লতা পারুল আপন বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল হয়ে শোভা ছড়ায়। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম Manosa alliacea, এটি Bignoniaceae পরিবারের উদ্ভিদ। এদের পাতায় রসুনের গন্ধ থাকায় লতা পারুলের ইংরেজি নাম Garlic vine। এটি বাংলায় নীল পারুল, রসুন্দি, রসুন্ধি লতা ইত্যাদি নামে পরিচিত।

ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে, ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমি, বলধা গার্ডেন, উত্তরা, বনানী ও ধানমন্ডি এলাকায় লতা পারুলগাছ রয়েছে। পারুল আর লতা পারুল সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ফুল। পারুলের বৈজ্ঞানিক নাম Stereospermum chelonoides, এটি Bignoniaceae পরিবারের বৃক্ষ। গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের স্কুল-লাগোয়া মাঠের ধারে পাঁচটি পারুলগাছ রয়েছে। কয়েক বছর আগে তরুপল্লবের পারুল সন্দর্শন ও গাছ চেনা কর্মসূচিতে গিয়ে এগুলো দেখে এসেছি।

লতা পারুলগাছে বছরে দুবার ফুল ফোটে। প্রথমবার ফুল ফোটে ঝরে যাওয়ার পরে। আবার নতুন করে কলি আসে এবং প্রচুর ফুল ফোটে। সাধারণত থোকায় থোকায় ফুল ফোটে এবং ফুলগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। ফুল হালকা বেগুনি, অনেকগুলো বড় বড় থোকায় ফোটে।

দল ফানেলাকার, পাপড়ি পাঁচটি মুক্ত, পাতা যৌগিক, পত্রক আয়তাকার, ৪ থেকে ৫ সেন্টিমিটার লম্বা, মসৃণ। শীর্ষের পত্রক প্রায়ই আকর্ষীতে পরিণত হয়। এর লতা কোনো অবলম্বন বা বৃক্ষের গা ভর করে বেড়ে ওঠে এবং পরবর্তী সময়ে মাঝারি ঝোপে পরিণত হয়। শাখার অগ্রভাগে বড় থোকায় প্রচুর ফুল ফোটে। ফুল ফোটার আগে পাপড়ির অগ্রভাগের রং গাঢ় বেগুনি ও গোড়ার দিকের রং হালকা বেগুনি থাকে। ফুটন্ত ফুল সকালে সজীব থাকে। তবে রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়ি কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে।

ফুল ও কলির রংও দেখতে চমৎকার। দেখতে যত সুন্দরই হোক, লতা পারুলের ফুলে কোনো ঘ্রাণ থাকে না। হালকা রোদ-ছায়া পরিবেশে লতা পারুল ভালো জন্মে এবং ফুলের উজ্জ্বলতা অটুট থাকে অনেক দিন। শাখা কলমের মাধ্যমে এর চাষ করা যায়। তা ছাড়া শিকড়ের কাটিং থেকেও চারা তৈরি করা যায়।

  • চয়ন বিকাশ ভদ্র, অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ