ঢাকায় বায়ুদূষণ বাড়ছেই, বাড়ছে কাশি, শ্বাসকষ্ট
২৮ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, বেলা ১১টা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ২৫০ শয্যার টিবি (যক্ষ্মা) হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, বহির্বিভাগ রোগীর ভিড়ে ঠাসা। একটি চেয়ারও খালি নেই। দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শীত আসতেই রোগীর ভিড় বাড়ছে হাসপাতালটিতে। কেউ এসেছেন যক্ষ্মা নিয়ে, কেউ হাঁপানি বা অ্যাজমা নিয়ে, কেউ শ্বাসকষ্ট নিয়ে।
টিবি হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আয়শা আক্তার প্রথম আলোকে বললেন, ঢাকার বায়ুদূষণ পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তার সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে। দূষণ বেড়ে যাওয়ার এ সময়ে রোগীও বাড়ে।
যক্ষ্মা হাসপাতালে যখন রোগীর ভিড়, বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার জানাচ্ছে, বিগত সাত দিন ঢাকার বায়ুমান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রায়ই ১ নম্বরে থাকে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে রাত পৌনে ৯টায় বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা ছিল তৃতীয়। শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের লাহোর, দ্বিতীয় ভারতের নয়াদিল্লি।
আইকিউএয়ারের ২০২৩ সালের বছরভিত্তিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বায়ুদূষণ বেশি বাংলাদেশে। এ তালিকায় ১ নম্বরে বাংলাদেশ। এরপর রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, তাজিকিস্তান ও বুরকিনা ফাসো। বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় ১ নম্বরে ছিল ভারতের নয়াদিল্লি। এরপর রয়েছে ঢাকা, বুরকিনা ফাসোর ওয়াগাডুগু, তাজিকিস্তানের দুশানবে ও ইরাকের বাগদাদ।
শুষ্ক মৌসুমে বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় ঢাকা প্রায়ই ১ নম্বরে থাকে। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে রাত পৌনে ৯টায় বিশ্বের ১২৫টি শহরের মধ্যে দূষণের দিক দিয়ে ঢাকা ছিল তৃতীয়। শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের লাহোর, দ্বিতীয় ভারতের নয়াদিল্লি।
বাংলাদেশ ও রাজধানী শহর ঢাকায় বায়ুদূষণের সমস্যাটি নতুন নয়। বছর বছর বায়ুর মানের অবনতি হচ্ছে। আইকিউএয়ারের হিসাবে, ২০১৬ সালে ঢাকার বায়ুমান সূচক ছিল ১৫০, যা ২০২৩ সালে ১৭১-এ উঠে যায়। মানে হলো বায়ুদূষণ বেড়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হওয়া আওয়ামী সরকারের আমলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে খুব একটা জোর দেওয়া হয়নি। নামকাওয়াস্তে অভিযান চালানো,কিছু চিঠি–চালাচালি, কয়েকটি গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানো এবং নির্মল বায়ু প্রকল্পের নামে নানা অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া তেমন কিছু করতে দেখা যায়নি। বরং আওয়ামী লীগ সরকার বায়ুদূষণকারী বহু পুরোনো যানবাহন ঢাকায় চলতে দিয়েছে ‘রাজনৈতিক স্বার্থে’। নিম্নমানের জ্বালানি তেল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। উন্নয়নকাজ চলার সময় বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো পদক্ষেপও দেখা যায়নি।
বায়ুদূষণের উৎসগুলো সবার জানা। ঠিক যেন পশ্চিমবঙ্গের গায়ক কবীর সুমনের গান, ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।’
বায়ুদূষণের বড় কারণ অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (পিএম ২.৫) কমাতে হলে ১৭টি মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু কাজের কাজ অতীতে তেমন কিছু হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, একের পর এক প্রকল্প নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ঢাকার বায়ুমান দিন দিন অবনতির দিকেই গেছে। এখনো নতুন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কথা হচ্ছে, কাজ হচ্ছে না।
বায়ুদূষণের উৎস কী
বায়ুদূষণের উৎসগুলো সবার জানা। ঠিক যেন পশ্চিমবঙ্গের গায়ক কবীর সুমনের গান, ‘প্রশ্নগুলো সহজ, আর উত্তরও তো জানা।’
ঢাকার রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, খোঁড়াখুঁড়ি অথবা নির্মাণকাজ চলছে; সেখানে ধুলাবালু যথেচ্ছভাবে ছড়াচ্ছে। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, বহু পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় বাস, লেগুনার মতো যানবাহন কালো ধোঁয়া ছেড়ে চলাচল করছে। রাস্তায় বের হলেই দেখা যায়, জমা করে বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) তথ্যানুযায়ী, ঢাকায় বায়ুদূষণের বড় উৎস নির্মাণকাজ। এরপর রয়েছে ইটভাটা ও কারখানা, যানবাহন, আন্তর্দেশীয় দূষিত বায়ু, রান্নার চুলা এবং বর্জ্য পোড়ানো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম ও তাঁর সহকারীরা ১৩ বছর ধরে ঢাকার বাতাসের ক্ষতিকর উপাদানগুলোর পরিমাপ করে আসছেন। তাঁরা বায়ুর মান পরিবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যে বাতাসের অবস্থা দেখেন। পাশাপাশি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের (নাসা) উপগ্রহ থেকে পাওয়া উপাত্তের সহায়তা নেওয়া হয়। তাঁদের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ঢাকার বাতাসে অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের সঙ্গে চারটি উপাদানের আশঙ্কাজনক উপস্থিতি রয়েছে—নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড, অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা, সালফার ডাই–অক্সাইড ও ব্ল্যাক কার্বন।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) তথ্যানুযায়ী, ঢাকায় বায়ুদূষণের বড় উৎস নির্মাণকাজ। এরপর রয়েছে ইটভাটা ও কারখানা, যানবাহন, আন্তর্দেশীয় দূষিত বায়ু, রান্নার চুলা এবং বর্জ্য পোড়ানো।
কয়লা, ডিজেল, পেট্রল বা অন্যান্য জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ালে নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড উৎপন্ন হয়। এটি বিষাক্ত গ্যাস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের গবেষকেরা দেখিয়েছেন, ঢাকার বাতাসে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত হিসাবে, নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রতি ঘনমিটারে ১৯ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০০৩ সালে ছিল বছরজুড়ে গড়ে ১১ মাইক্রোগ্রামের কিছুটা কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী, বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইডের সহনীয় মাত্রা হলো ১০ মাইক্রোগ্রাম।
ঢাকার বাতাসে ভেসে বেড়ানো অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা পাওয়া গেছে প্রতি ঘনমিটারে ৮৬ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০০৩ সালে ছিল ৭২ মাইক্রোগ্রাম। ডব্লিউএইচও বলছে, বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার সহনীয় মাত্রা ৫ মাইক্রোগ্রাম।
ঢাকার বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইডের পরিমাণ পাওয়া গেছে ৮ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম, যা ২০০৩ সালে ছিল ৫ মাইক্রোগ্রাম। ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী, বাতাসে সালফার ডাই–অক্সাইডের সহনীয় মাত্রা ৪০। অর্থাৎ সালফার ডাই–অক্সাইড সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম রয়েছে ঢাকার বাতাসে। কিন্তু এটা বাড়ছে। গত বছর যা ছিল মাত্র ৬ মাইক্রোগ্রাম।
ডিজেলের ইঞ্জিন ও কয়লানির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের কালো ধোঁয়া ব্ল্যাক কার্বন নামে পরিচিত। বাতাসে এর সহনীয় মাত্রা কত থাকা দরকার, এর কোনো মানদণ্ড নির্ধারণ করেনি ডব্লিউএইচও। তবে ঢাকার বাতাসে এর উপস্থিতি বাড়ছে। ঢাকার বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ব্ল্যাক কার্বনের উপস্থিতি থাকে ৮ থেকে ১০ মাইক্রোগ্রাম। আর গত বছর সর্বোচ্চ হয়েছিল ২৩ মাইক্রোগ্রাম। এ বছর তা ইতিমধ্যে ২৪ মাইক্রোগ্রাম হয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংক গত মার্চে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে। এ ছাড়া দূষণের কারণে ওই বছর দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৭ দশমিক ৬ শতাংশ সমপরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে।
সরকার কী করছে
দূষণ দূর করতে প্রকল্প কম হয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, বায়ুদূষণ রোধে সরকার ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দুটি প্রকল্পে অন্তত ৭২০ কোটি টাকার ব্যয় করেছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে ১০ বছর পর্যন্ত শেষ হওয়া প্রায় ৩০০ কোটি টাকার প্রকল্প ‘নির্মল বায়ু টেকসই পরিবেশ (কেস)’ নিয়ে ২০১৯ সালেই তৎকালীন সংসদীয় কমিটি আপত্তি তোলে। এ প্রকল্পে অনেকটা ‘অপচয়ের পর’ এখন নতুন করে বায়ু, পানিদূষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার ‘বাংলাদেশে টেকসই পরিবেশ ও রূপান্তর (বেস্ট)’ শিরোনামে আরেকটি প্রকল্প নিয়েছে। এতে ২৫ কোটি ডলার (২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা) অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক। গত বছরের জুন মাসে শুরু হয়েছে, চলবে ২০২৮ সাল পর্যন্ত।
অবশ্য বেস্ট প্রকল্পের অগ্রগতি ততটা ভালো নয় বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক। তিনি বলেন, ওই প্রকল্পের একাধিক উপাদানের মধ্যে একটি ছিল বায়ুর মান উন্নয়ন। সেটা আলাদা করে এনে এখন বাংলাদেশ ‘ক্লিন এয়ার প্রজেক্ট’ নামে একটি নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাড়ে তিন মাসের মতো হয়েছে। নতুন সরকারে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, যিনি পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।
বিশ্বব্যাংক গত মার্চে ‘দ্য বাংলাদেশ কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস (সিইএ)’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০১৯ সালে বায়ুদূষণসহ চার ধরনের পরিবেশদূষণে ২ লাখ ৭২ হাজারের বেশি মানুষের অকালমৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বায়ুদূষণের কারণে।
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ঢাকার গাজীপুরে কয়েকটি ব্যাটারির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব কারখানা থেকে বিষাক্ত সিসা ছড়ায়। ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস ইটভাটার লাইসেন্স নবায়ন না করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঢাকার বায়ুর মানের উন্নতিতে সরকার কী করছে, জানতে চাইলে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি স্থাপনা নির্মাণে পোড়া ইটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তিনি বলেছেন। ফিটনেসবিহীন যানবাহনকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাস নামাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবহনমালিকদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকার ধুলাবালু কমাতে রাস্তায় পানি দিতে বলেছেন তিনি। সেটাও দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁকে জানানো হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) জিয়াউল হক প্রথম আলোকে জানান, গত অক্টোবরে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান’ নামে একটি পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ ৩০ মাইক্রোগ্রাম কমানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা এখন ৮৬ মাইক্রোগ্রাম।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নতুন সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ইতিবাচক। কিন্তু কাজ করে দেখাতে না পারলে মানুষের দুর্ভোগ কমবে না।
উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি স্থাপনা নির্মাণে পোড়া ইটের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে তিনি বলেছেন। ফিটনেসবিহীন যানবাহনকে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাস নামাতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পরিবহনমালিকদের বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ঢাকার ধুলাবালু কমাতে রাস্তায় পানি দিতে বলেছেন তিনি। সেটাও দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁকে জানানো হয়েছে।
হাসপাতালে রোগীদের ভিড়
বায়ু দূষিত হলে মানুষের শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। ঘরে ঘরে যেমন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত মানুষ বাড়ে, তেমনি হাসপাতালে বাড়ে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড়।
কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, যক্ষ্মা হাসপাতালে গত মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮০। পরদিন বুধবার রোগীর সংখ্যা হয় ৪৫০। ভর্তি রোগীর সংখ্যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৮০। বৃহস্পতিবার তা বেড়ে হয় ১০১।
চিকিৎসকেরা জানান, বহির্বিভাগে যত রোগী সেবা নিচ্ছেন, তাঁদের প্রায় ৯০ শতাংশই ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা। ভর্তি রোগীদের প্রায় ৭৫ শতাংশ ঢাকায় থাকেন।
যক্ষ্মা হাসপাতালের বহির্বিভাগে দেখা হলো মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বাসিন্দা সায়েদা সুলতানার সঙ্গে। তখন তিনি চিকিৎসককে দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এই চাকরিজীবী নারী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, শীত পড়তে শুরু করলেই শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।
বক্ষব্যাধির ক্ষেত্রে দেশের বড় প্রতিষ্ঠান মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল। এ প্রতিষ্ঠানে গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৮০০ রোগী দেখা হয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও এর পরিমাণ ছিল ৪০০ থেকে ৪৩০ জন, এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির সহকারী অধ্যাপক (চেস্ট মেডিসিন) ডা. জিয়াউল করিম। তিনি বলেন, ‘এ সময়ে বক্ষব্যাধি শীতের কারণে বাড়ে, এটা ঠিক। তবে আমি এ ক্ষেত্রে বড় দায়ী করব ঢাকার দূষিত বাতাসকে। দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু হাসপাতালে নয়, আমি আমার ব্যক্তিগত চেম্বারের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি দেখি।’
ঢাকায় বর্ষায় ডেঙ্গুর ভয়, শীতে বায়ুদূষণের ভয়, সারা বছর থাকে শব্দদূষণ—মানুষ এ থেকে মুক্তির অপেক্ষায়।