‘পুরো গ্রামবাসীর ঈদের আনন্দ নিমেষেই শেষ’
‘ঈদের আনন্দ নিয়ে সকালে নামাজ পড়তে গেলাম। ফিরে এসে দেখি পুরো বাড়ি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। বাঁধ ভেঙে পুরো গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। পুরো গ্রামবাসীর ঈদের আনন্দ নিমেষেই শেষ।’
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত ‘ইয়ুথ ক্লাইমেট স্ট্রাইক’শীর্ষক এক কর্মসূচিতে এভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে উপকূলবর্তী মানুষের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেছেন সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের এস এম শাহিন।
সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনার সংশোধন, জলবায়ু সুবিচার, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো, নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার ও জলবায়ু অর্থায়নে উন্নত দেশের প্রতিশ্রুতি রক্ষার দাবিতে বিশ্বব্যাপী এই কর্মসূচির মূল আয়োজক স্কুলশিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’। এই সংগঠনের সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশে এই কর্মসূচি পালন করে জলবায়ুকর্মীদের সংগঠন ‘ইয়ুথ নেট’।
এস এম শাহিন বলেন, ‘উন্নত বিশ্ব অর্থনৈতিক উন্নতির শিখরে উঠেছে জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বেড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে। সেটার ফল ভোগ করতে হচ্ছে আমাদের মতো গরিব দেশের উপকূলের বাসিন্দাদের।’
উন্নত বিশ্ব ক্ষতিপূরণ হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের জন্য যে অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, সেটা রক্ষার দাবি জানানো হয় এই কর্মসূচি থেকে।
বরিশালের বাবুগঞ্জ থেকে আসা মো. সিয়াম শিকদার বলেন, ‘আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। নতুন বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ৪১টি জেলা সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। আমাদের ঠাঁই হবে কোথায়? রাজধানী ঢাকা কী এ মানুষের ঢলের ভার নিতে পারবে।’
জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় নীতিনির্ধারকদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
কর্মসূচিতে গ্লোবাল ইয়ুথ নেটের নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, ‘সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনায় স্বার্থান্বেষী মহলের সুবিধা নিশ্চিত করার পরিবর্তে একটি ন্যায্য, স্বচ্ছ ও স্থানীয় বাস্তবতার আলোকে মহাপরিকল্পনায় সংশোধন আনা জরুরি। জীবাশ্ম জ্বালানির মুনাফার জন্য আমাদের ভবিষ্যৎকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেওয়া যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারই একমাত্র টেকসই পথ।’
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় ২০১৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ধর্মঘট পালন করে আসছে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের জলবায়ুকর্মীরা।