চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে ট্রেন চলবে কবে, সিদ্ধান্ত আজ সন্ধ্যায়

ফেনীতে বন্যায় ডুবে যাওয়া রেললাইনফাইল ছবি

এবারের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে রেললাইন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানিতে টানা চার দিন ডুবে ছিল রেললাইনের বিভিন্ন অংশ। এতে গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গতকাল রোববার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে রেললাইন এখনো ট্রেন চলাচলের উপযোগী হয়নি। কবে নাগাদ ট্রেন চলাচল শুরু হবে, তা আজ সোমবার সন্ধ্যায় জানা যাবে।

রেললাইনের বর্তমান পরিস্থিতি দেখতে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আজ সকালে ফেনীতে যাচ্ছেন। তাঁরা রেললাইনের সার্বিক অবস্থা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখবেন। এ ছাড়া কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা–ও পরিমাপ করবেন। এই ক্ষতি সারতে কত দিন লাগতে পারে, তা ঠিক করবেন। এর আগে গত শনি ও রোববার রেলওয়ের উদ্ধারকারী ট্রেন রেললাইন ঘুরে এসেছে। তবে পানি থাকার কারণে সব অংশে পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এবার স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। বন্যায় ফেনী থেকে ফাজিলপুর পর্যন্ত অংশে দুটি রেললাইনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু রেললাইন নয়, রেলসেতুর ওপর দিয়েও পানি ছিল। এসব কারণে ট্রেন চালানো সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় ট্রেন চললে যাত্রীদের বিপদের পাশাপাশি রেলসম্পদেরও ক্ষতি হওয়ার শঙ্কা ছিল।

রেলওয়ের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (চট্টগ্রাম) আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, রেললাইনের পরিস্থিতি দেখতে সকালে ফেনীতে যাচ্ছেন। ঢাকা থেকেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আসবেন। পরিদর্শনের সময় রেললাইনের অবস্থা পরীক্ষা করে দেখা হবে। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর ট্রেন কবে থেকে চলবে—এ বিষয়ে সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের আলাপ–আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

চট্টগ্রামের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন মানুষ। কেননা, বন্যার কারণে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন অংশও তলিয়ে গিয়েছিল। এতে যান চলাচল কার্যত থমকে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট সৃষ্টি হয় মহাসড়কে। ট্রেন বন্ধ এবং সড়কপথে যানজটের কারণে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।

গত বুধবার থেকে কুমিল্লা ও ফেনীর বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হতে থাকে। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের কয়েকটি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। এ সময় ফেনীতে রেললাইন ডুবে যায়। এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা–চট্টগ্রাম রেলপথে দুটি রেললাইন আছে। এবারের বন্যায় দুটি রেললাইনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন পরিদর্শন করবেন আজ। পরিদর্শনের পর ক্ষতির প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে। তবে বন্যায় দুটি রেললাইন থেকে পাথর সরে গেছে। আরও কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা পরিমাপ করবেন। ইতিমধ্যে কিছু কিছু অংশে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। এখন পানি নেমে গেছে, তাই সংস্কারকাজ পুরোদমে শুরু হবে। স্বল্প সময়ের মধ্যে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার চেষ্টা থাকবে তাঁদের। যাতে দ্রুত ট্রেন চলাচল করতে পারে।

এদিকে আজ সকাল থেকে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রুটে কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেন চলাচল করেছে নির্ধারিত সময়ে। আজ সকাল সাতটায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে এই ট্রেন ছেড়ে যায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনও চলাচল করছে।