চলছে মহড়া, আলোর পথে যাত্রার আহ্বান থাকবে রমনার বটমূলে

রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণের জন্য ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে চলছে মহড়া। ঢাকা, ৫ এপ্রিলছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

আঁধার কাটিয়ে আলোর পথে যাত্রার আহ্বান নিয়ে এবারও নতুন বছরের শুরুতে রমনার বটমূলে হবে ছায়ানটের ঐতিহ্যবাহী নববর্ষের অনুষ্ঠান। এবার অনুষ্ঠানের মূলভাব নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট বাংলা নববর্ষের সকালে এই অনুষ্ঠানের প্রথম আয়োজন করেছিল ১৯৬৭ সালে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সুচারু করে তুলতে দীর্ঘ প্রস্তুতি থাকে ছায়ানটের। অনুষ্ঠানের মূলভাব নির্ধারণ করা হয় প্রথমে। তারপর সেই ভাবনাকে পরিস্ফুটিত করে তুলতে চলে গান, আবৃত্তির জন্য কবিতা ও পাঠের জন্য লেখা নির্বাচন পর্ব। এরপর শুরু হয় মহড়া। এবারেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। প্রতিপাদ্য নির্ধারণ, গান কবিতার বাছাই সব শেষ, চলছে নিয়মিত মহড়া।

আজ শনিবার বিকেলে ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে গিয়ে দেখা গেল রমেশ চন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে পুরোদমে চলছে সম্মেলক গানের মহড়া। মেঝেতে মাদুর পাতা। সম্মেলক দলের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা বসে একের পর গেয়ে যাচ্ছিল, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’, ‘মোরা সত্যের পরে মন আজি করিব সমর্পণ,’ ‘জয় হোক তব জয়’ গানগুলো। পরিচালনা করছিলেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা। সুরে, তালে বা উচ্চারণে ভুল হলে শুধরে দিচ্ছিলেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এবারের অনুষ্ঠানের মহড়া শুরু হয়েছিল তিন মাস আগে। তখন সপ্তাহে দুই দিন মহড়া হতো। ঈদের ছুটির পর থেকে প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মহড়া চলছে। মহড়ায় আরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, রেজাউল করিম ও সত্যম কুমার দেবনাথ।

এবার অনুষ্ঠানে শতাধিক শিল্পী অংশ নেবেন। তাঁদের মধ্যে শিশু-কিশোরের সংখ্যাই থাকবে বেশি। বিশিষ্ট শিল্পীদের কণ্ঠে থাকবে একক গান, পাঠ ও আবৃত্তি। সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টির মতো পরিবেশনা থাকবে। তবে সংখ্যা চূড়ান্ত করা হয়নি। যুগ্ম সম্পাদক পার্থ তানভীর নভেদ জানালেন, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লোকসংগীত ও গণসংগীত থাকবে অনুষ্ঠানে। সম্মেলক গানের মধ্যে ‘ও আলোর পথযাত্রী’, ‘এই বাংলা রবি ঠাকুরের, এই বাংলা নজরুলের’, ‘আজ আইল বছর ঘুরে’ এই গানগুলো থাকবে।

রমনার বটমূলে নববর্ষের সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হবে সুপ্রিয়া দাসের পরিবেশনায় ভোরের রাগসংগীত দিয়ে। একক শিল্পীদের মধ্যে থাকবেন খায়রুল আনাম শাকিল, চন্দনা মজুমদার, লাইসা আহমদ লিসা, আবুল কালাম আজাদ, সেঁজুতি বড়ুয়া, সুমন মজুমদার প্রমুখ। আবৃত্তি করবেন জয়ন্ত রায়। অনুষ্ঠান বিরতিহীনভাবে চলবে দুই ঘণ্টা।

রমনার বটমূলে মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হবে ৮ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে। মঞ্চে চূড়ান্ত মহড়া হবে ১৩ এপ্রিল রোববার বিকেলে। এবার অনুষ্ঠানে পুরুষের পোশাক থাকবে সাদা পায়জামা ও মেরুন পাঞ্জাবি আর নারীদের মেরুন পাড়ের অফ হোয়াইট শাড়ি।

রমনার বটমূলে এবারও ছায়ানটের আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠানের জন্য ধানমন্ডির ছায়ানট সংস্কৃতি–ভবনে চলছে মহড়া। ঢাকা, ৫ এপ্রিল
ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

ছায়ানটের এই প্রভাতি গানের অনুষ্ঠানের শেষে সংক্ষিপ্ত একটি বক্তব্য থাকে। একেবারে শুরুর দিকের অনুষ্ঠানে কোনো সমাপনী বক্তব্য থাকত না। গত দুই দশক আগে এটি চালু হয়েছিল। প্রথম দিকে বক্তব্য দিতেন সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক। তিনি প্রয়াত হওয়ার পর থেকে বক্তব্য দিতেন সভাপতি সন্‌জীদা খাতুন। অসুস্থতার কারণে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থাকলে তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ সন্‌জীদা খাতুনও অনন্তের পথে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে এবার এই সমাপনী বক্তব্য দেবেন নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী।

সংগীতজ্ঞ সন্‌জীদা খাতুন ছিলেন এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের শুরুর উদ্যোক্তাদের অন্যতম। এবার তাঁর অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠানের কোনো হেরফের হবে না বলে জানালেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক শিল্পী লাইসা আহমদ লিসা। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, অনুষ্ঠান বরাবর যেমন হয় তেমনি হবে সবাইকে নিয়ে, নতুন বছরের শুরুতে সবার মঙ্গল কামনা করা হবে। অনুষ্ঠানের মূল ভাবনা কী হবে, তা সন্‌জীদা খাতুনের জীবিত থাকতে তাঁর অভিমত নিয়েই নির্ধারণ করা হয়েছিল। লাইসা আহমদ বললেন, এটা দেশের ঋতুভিত্তিক সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠান। ধর্ম–বর্ণনির্বিশেষে সব মানুষ এতে অংশ নিয়ে থাকেন। সব বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে চলার আশাবাদ থাকবে নববর্ষের অনুষ্ঠানে।