হাসিনা–মোদির আলোচনায় গুরুত্ব পাবে চীনও
দুই নিকট প্রতিবেশীর সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পথরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ শনিবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে আলোচনায় বসছেন। সহযোগিতার বর্তমান ধারা অব্যাহত রেখে নতুন কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করবেন তাঁরা।
দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর সহযোগিতার নানা বিষয়ে ১০টির বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই ও নবায়ন হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনের সফরে গতকাল শুক্রবার বিকেলে দিল্লিতে পৌঁছান। ভারতের পালাম বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তি বর্ধন সিং।
ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ব্যাপারে দিল্লি অন্ধকারে থাকতে চায় না। বেইজিং সফরের আগে দিল্লিতে আসাটা নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার সঠিক কৌশল।হর্ষ পন্থ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, ওআরএফ (দিল্লিভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান)
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দুই প্রধানমন্ত্রী এবার শীর্ষ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন ভিন্ন সময় আর ভিন্ন পরিস্থিতিতে। আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে শেখ হাসিনার বেইজিং যাওয়ার কথা রয়েছে। পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবার দুই দেশের সম্পর্কের চেয়ে যেন বড় হয়ে উঠছে চীন প্রসঙ্গ।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, দুই শীর্ষ নেতা সম্পর্কের ভবিষ্যতের যে পথরেখার নির্দেশনা দেবেন, তাতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, নানা ক্ষেত্রে যোগাযোগ (কানেকটিভিটি), জ্বালানি ও পানিসম্পদের মতো বিষয়গুলো থাকছে।
দিল্লির একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার দিনের প্রথম ভাগে হায়দরাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি তিনভাবে আলোচনায় বসছেন। দুই শীর্ষ নেতা একান্তে আলোচনার পাশাপাশি কয়েকজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে এবং পরে বড় পরিসরে প্রতিনিধিদল নিয়ে আলাদা বৈঠক করবেন।
আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় নানা প্রসঙ্গ
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত বিষয়গুলো যেমন সীমান্ত হত্যা, পানিবণ্টন সমস্যা বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা—কয়েক বছর ধরে আলোচনায় আছে। এবারের আলোচনায়ও এগুলো আসবে। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা, জ্বালানিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের নানা বিষয়ের মধ্যে মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকটের মতো বিষয়ও থাকছে।
জানা গেছে, দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীদের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল নিয়ে আলোচনার সময় চীনের প্রসঙ্গটি আসার কথা রয়েছে। এর পাশাপাশি তিস্তার পানিবণ্টন, যোগাযোগের মতো দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনায় চীন প্রসঙ্গও আসতে পারে।
দিল্লির একাধিক কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার দিনের প্রথম ভাগে হায়দরাবাদ হাউসে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি তিনভাবে আলোচনায় বসছেন। দুই শীর্ষ নেতা একান্তে আলোচনার পাশাপাশি কয়েকজন প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে এবং পরে বড় পরিসরে প্রতিনিধিদল নিয়ে আলাদা বৈঠক করবেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, গত মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফর নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করে যান। সে অনুযায়ী ২১ ও ২২ জুন সম্ভাব্য দিনক্ষণও ঠিক করা হয়েছিল। যেহেতু জুলাইয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজিং সফরের কথা, তাই ভারত এর আগেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে তৈরি ছিল। যদিও মাঝে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফর করেন। ওই সফরের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পিত দিল্লি সফর হবে কি না, তা নিয়ে স্বল্প সময়ের জন্য হলেও সংশয় তৈরি হয়েছিল।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতে এনডিএ জোট আবার ক্ষমতায় আসার পর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে নিবিড় সম্পর্কের ব্যাপারে মনোযোগ অব্যাহত রাখছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির নিরিখে ভারত ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ও চীন সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে “জিরো সাম গেম” (এক পক্ষই লাভবান) বলে কিছু নেই। সবার জন্য লাভজনক এমন একটি পরিস্থিতিতে থাকতে চাইছি সব দেশের সঙ্গে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে, ভৌগোলিক অবস্থান রয়েছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে অন্য কোনো দেশের তুলনা করতে চাইছি না। প্রতিটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা এবং প্রেক্ষাপট থাকে। আমাদের যে অগ্রাধিকার, উদ্বেগ বা জাতীয় স্বার্থ—সেগুলোকে আমরা অগ্রাধিকার হিসেবে রাখতে চাই।’
‘শুধুই তিস্তা নয়’
বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের মাঝখানে ২০২০ সাল থেকে হঠাৎ চীন বড় পরিসরে আলোচনায় আসছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতের অন্যতম অভিন্ন নদী তিস্তার অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি ২০১১ সালে চূড়ান্ত হওয়ার পরও সই হয়নি। চীন তিস্তায় একটি বড় প্রকল্পের প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশকে। বিষয়টি ভারতের কাছে এমনই স্পর্শকাতর প্রতীয়মান হয় যে করোনা সংক্রমণের পর্বে লকডাউনের মধ্যে এ নিয়ে আলোচনার জন্য ঢাকায় এসেছিলেন দেশটির তখনকার পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। এরপর বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে তিস্তার প্রকল্প নিয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি। যদিও দুই বছর ধরে চীন প্রকল্পটি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে চলেছে। আর ভারতের অস্বস্তির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে তিস্তায় চীনের প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশ চলছে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত ও চীন সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে “জিরো সাম গেম” (এক পক্ষই লাভবান) বলে কিছু নেই।পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন
দিল্লির একাধিক কূটনীতিক সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, তিস্তা নিয়ে হঠাৎ ভারত আগ্রহী হয়ে উঠেছে। চীন যে ধরনের প্রস্তাব দিয়েছে, এবার শীর্ষ বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকেও তেমন একটি প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। চীনের অর্থায়ন কিংবা বিনিয়োগে নানা জটিলতা থাকে, স্বচ্ছতার অভাব থাকে। আবার তিস্তা দুই নিকট প্রতিবেশীর ৫৪টি অভিন্ন নদীর অন্যতম—এসব বিষয় সামনে এনে ভারত বলতে পারে, তিস্তায় দুই দেশ মিলে একটি প্রকল্প হতে পারে। যেখানে বাইরের কোনো পক্ষকে যুক্ত করার প্রয়োজন নেই।
তিস্তা নিয়ে ভারতের বিকল্প প্রস্তাবের কথা শোনা গেলেও এর ধরন ও অর্থায়ন কিছুই এখনো স্পষ্ট নয়। এবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাঁরা দিল্লি গেছেন, তাঁদের মধ্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান নেই। ফলে তিস্তা নিয়ে ভারতের নতুন প্রস্তাবের কথা শোনা গেলেও তেমন কোনো দলিল সইয়ের সম্ভাবনা কম।
রুপি-টাকা, রেল ও বন্দর
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকি দিল্লি গেছেন। ডলারকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কীভাবে রুপি-টাকায় বাণিজ্যিক লেনদেন আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশকে দেওয়া ভারতের ঋণচুক্তির বাস্তবায়ন কতটা দ্রুত করা যায় ও অতিরিক্ত ঋণ কোন শর্তে দেওয়া যায়, সে বিষয়টিও এবার আলোচনায় গুরুত্ব পাবে। ঋণচুক্তির বিষয়ে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণায় তা উল্লেখ থাকবে।
দিল্লির একটি সূত্র জানিয়েছে, মোংলা বন্দর নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তুলে ধরার কথা রয়েছে। মূলত মোংলা বন্দরে একটি টার্মিনাল নির্মাণের কথা বিবেচনা করছে ভারত। প্রসঙ্গত, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে চীন থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ।
দিল্লির একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ভারত বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু। এখন চীনের ভালো বিকল্প হয়েও যে থাকতে চায়, তারই অংশ হিসেবে রুপি-টাকায় লেনদেন ও নতুন শর্তে ঋণচুক্তির আলোচনা। কারণ, চীনও স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের জন্য চুক্তি করার পাশাপাশি বাংলাদেশকে বাণিজ্য সহায়তার অংশ হিসেবে ৫০০ কোটি ডলারের সমমান চীনা ইয়েন ঋণ দিতে চায়। এ পরিস্থিতিতে ভারত মনে করছে, বাংলাদেশের সামনে চীনই একমাত্র বিকল্প নয়। বাংলাদেশকে সহযোগিতার জন্য ভারতও তৈরি আছে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সংযুক্তির ক্ষেত্রে গত এক যুগে রেলের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে ভারত। মানুষ ও পণ্য পরিবহনে ভারত উপমহাদেশের বিভক্তির আগের পর্বের যোগাযোগব্যবস্থায় ফেরার ওপর জোর দিচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহারে মনোযোগ আছে। এবারের বৈঠকে ভারত হয়ে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে রেল সংযোগে দিল্লি জোর দিতে পারে। বাংলাদেশ রেলপথ বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে, বেসরকারি খাতের জন্য বাংলাদেশের রেল উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো দেশ যেন সুবিধা না পায়, সেটি যেন ঢাকা বিবেচনায় রাখে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও চীনের সম্পর্কের মাত্রা ও গভীরতা একেবারেই ভিন্ন। একটি সম্পর্কের সঙ্গে অন্য সম্পর্কের কোনো মিল নেই। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখাসাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির
দিল্লির একটি সূত্র জানিয়েছে, মোংলা বন্দর নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তুলে ধরার কথা রয়েছে। মূলত মোংলা বন্দরে একটি টার্মিনাল নির্মাণের কথা বিবেচনা করছে ভারত। প্রসঙ্গত, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে চীন থেকে ঋণ নিয়েছে বাংলাদেশ।
জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও চীনের সম্পর্কের মাত্রা ও গভীরতা একেবারেই ভিন্ন। একটি সম্পর্কের সঙ্গে অন্য সম্পর্কের কোনো মিল নেই। তাই ভারতের উচিত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা। দুই দেশের সম্পর্ককে চীনের সঙ্গে গুলিয়ে দেখা সমীচীন হবে না। বাংলাদেশ জাতীয় স্বার্থে নানা দেশের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর দায়িত্বশীল ও সুপ্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশ এমন কিছু করবে না, যাতে ভারতের মতো ঘনিষ্ঠ বন্ধুর স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়। বাংলাদেশের ওপর ভারতের এই আস্থাটা রাখা উচিত। আর বিশ্বাস ও পারস্পরিক সম্মানবোধের ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন।
ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ভারত মহাসাগরসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে চীন যে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেটা নতুন নয়। ভারতের এই অবস্থান রাতারাতি পরিবর্তন হওয়ার কোনো সুযোগ নেই; বরং এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের যুক্ততা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে থাকবে। কারণ, আর্থিক সহায়তা নিয়ে চীন যেভাবে এগিয়ে এসেছে, সেটি হয়তো অব্যাহত থাকবে। কিন্তু চীনের চেয়ে ভালো বিকল্প কিংবা সংকটকালীন বন্ধু হিসেবে কীভাবে এগিয়ে আসবে, সেটিই প্রতিবেশীর কাছে তুলে ধরতে থাকবে ভারত। এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা আর মালদ্বীপের আর্থিক সংকটে হাত বাড়িয়ে দেওয়াকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ভারত সামনে আনছে।
কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যেভাবেই হোক না কেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি আর বেইজিং সফর ভূরাজনীতির কারণে একধরনের ‘ভারসাম্যের সফর’ হয়ে গেছে। আর বাংলাদেশের জন্য এটা একধরনের চ্যালেঞ্জও। বাংলাদেশের নিজের স্বার্থেই নানা দেশ ও জোটের সঙ্গে সহযোগিতা বজায় রেখে চলাটা বাঞ্ছনীয়। তাই সব পক্ষকেই বাংলাদেশের জন্য বোঝানো জরুরি যে ঢাকা যে সহযোগিতা যার কাছ থেকে নিয়ে থাকে, তা অন্য দেশের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ হবে না।
দিল্লিভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) ভাইস প্রেসিডেন্ট হর্ষ পন্থ গতকাল দিল্লি থেকে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে দুই প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় চীনের প্রসঙ্গটি অনিবার্যভাবেই আসবে। শুধু তিস্তা প্রকল্প নয়, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কীভাবে এগোচ্ছে, সেটা ভারত জানতে ও বুঝতে চাইবে। আর বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ককে ভারত কীভাবে দেখতে চায়, সেটাও হয়তো তুলে ধরা হবে। সামগ্রিকভাবে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্কের ব্যাপারে দিল্লি অন্ধকারে থাকতে চায় না। তিনি মনে করেন, বেইজিং সফরের আগে দিল্লিতে আসাটা নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার সঠিক কৌশল।