ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের আগের ১০ বছরের অনির্বাচিত সরকারের সময়কে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম কিংবা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের মতো সংস্থাগুলো ‘অলৌকিক উন্নয়নের’ সময় হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। উন্নয়ন হলে তো গণ-অভ্যুত্থান হওয়ার কথা ছিল না, তাহলে কেন দেশে গণ-অভ্যুত্থানের প্রয়োজন হলো? কী ফাঁক ছিল সেই উন্নয়নে? গত ১০ বছরের ‘সর্বজনকথা’ পড়লে সেই ফাঁকগুলো চেনা যাবে, এর পেছনের বিশ্লেষণ বোঝা যাবে।
রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিশ্লেষণমূলক জার্নাল ‘সর্বজনকথা’র দশম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে লেখক-পাঠক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ। তিনি ‘সর্বজনকথা’র সম্পাদক। শুক্রবার বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সর্বজনকথা’ শুধু একটি পত্রিকা নয়, বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থেই একটি সর্বজনের এবং সর্বপ্রাণের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক প্রয়াস।
‘সর্বজনকথা’র বুদ্ধিবৃত্তিক রাজনৈতিক লড়াইকে আরও শক্তিশালী করার জন্য আনু মুহাম্মদ লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
চলচ্চিত্রনির্মাতা মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্র নিয়ে লেখার পরিসর খুবই সীমিত। যা দু-একটা পত্রিকা আছে, তাতেও একটি নির্দিষ্ট ধারার লেখা ছাপা হয়। সর্বজনকথাই একমাত্র যারা চলচ্চিত্র নিয়ে আমার ভিন্নধারা লেখা ছাপতে আগ্রহী দেখিয়েছিল।’
সর্বজনকথার লেখক ফাতেমা সুলতানা বলেন, ‘সর্বজনকথার বিষয়ভিত্তিক সূচিতে আমার লেখাটি “রাষ্ট্র” অংশে দেখে খুশি হয়েছি। সবখানেই দেখেছি, ধর্ষণ নিয়ে কোনো লেখা হলেই সেটিকে শুধু নারীর বিষয় হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সর্বজনকথা যে ধর্ষণকে শুধু নারীর বিষয় হিসেবে না রেখে রাষ্ট্রের মতো বড় পরিসরে নিয়ে এসেছে, এটা গুরুত্বপূর্ণ।’
সর্বজনকথার গবেষণা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী নাফিসা নাওয়ার নিঝুম বলেন, ‘মাগুরার মতো মফস্সল শহরের ক্লাস ইলেভেনের ছাত্রী হিসেবে গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকলেও নিয়মতান্ত্রিকভাবে শেখার কোনো সুযোগ ছিল না। অনলাইনে কর্মশালা করে বিষয়টি শেখার সুযোগ দেওয়ার জন্য সর্বজনকথার প্রতি কৃতজ্ঞতা।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন সর্বজনকথার নির্বাহী সম্পাদক কল্লোল মোস্তফা, প্রকাশক মোশাহিদা সুলতানা, সম্পাদনা পরিষদের সদস্য তানজীমউদ্দিন খান, সামিনা লুৎফা, মাহা মির্জা এবং ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্য রেজাউল করিম, শামীম ইমাম, মাহতাবউদ্দিন আহমেদ ও আনহা এফ খান।
মতবিনিময় সভায় সর্বজনকথার ১০ বছরের লেখা ও কার্যক্রম নিয়ে একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। সর্বজনকথার লেখক-পাঠক–শুভানুধ্যায়ীরা উন্মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করে সর্বজনকথা সম্পর্কে তাঁদের মতামত, পরামর্শ, সমালোচনা ব্যক্ত করেন। শেষ পর্বে গান পরিবেশন করেন গায়ক মুসা কলিম মুকুল।
সভায় সর্বজনকথার লেখকদের মধ্যে নিজেদের স্মৃতি ও পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করেন হারুন অর রশিদ, নেসার আহমেদ, আলমগীর খান, সাঈদ ফেরদৌসহ অনেকে।