দেয়ালের মতো কথা বলে মেঝেও
বলা হয়, ঘরের দেয়াল ‘কথা বলে’। রং, দেয়ালে ঝোলানো চিত্রকর্ম, দেয়াল সাজানোর বিভিন্ন ছোট ছোট জিনিস মিলিয়ে সেটা যেন হয়ে ওঠে একটি ‘জীবন্ত জিনিস’! ঘরের বাসিন্দাদের রুচির পরিচয়, চিন্তাধারার চিত্রায়ণ এই দেয়াল থেকেই পাওয়া যায়। শুধু কি দেয়াল? এখন একটি ঘরের মানুষের রুচির পরিচায়ক হয়ে উঠেছে মেঝেও। সেই হিসাবে বলা যেতেই পারে, কথা বলে ঘরের মেঝেও!
এক দশক আগেও বাড়ির মেঝে সাজানোর জন্য মানুষের প্রথম পছন্দ ছিল মোজাইক। টাইলসের দেখা মিলত বিলাসবহুল বাড়িগুলোতে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন টাইলসের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতিটি নতুন বাড়িতেই ব্যবহার করা হচ্ছে টাইলস।
এখন আর শুধু মেঝেতে টাইলসের ব্যবহার সীমাবদ্ধ নেই। ঘরের দেয়ালেও টাইলস ব্যবহার করছেন মধ্য ও উচ্চবিত্তরা। দেয়ালে টাইলস ব্যবহার করলে বারবার রং করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বারবার দেয়াল চুনকামও করতে হয় না। এ ছাড়া দেয়ালে আকর্ষণীয় টাইলস ব্যবহার করলে তা বাড়ির সৌন্দর্যও বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। ঘরের মেঝে, সিঁড়ি, পার্কিং এরিয়া—এমনকি ফুটপাতেও এখন টাইলস ব্যবহার হচ্ছে।
কিছুদিন আগেও টাইলসের ডিজাইনজনিত সীমাবদ্ধতা ছিল, এখন ডিজিটাল প্রিন্টিংসহ অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। যার কারণে নানা বৈচিত্র্যময় এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের টাইলস বাজারে পাওয়া যায়।
একসময় প্রতিটি ঘরের মেঝেতে একই ডিজাইনের টাইলস বসানো হতো। এখন বাসিন্দাদের রুচির ওপর ভিত্তি করে একেকটি ঘরে বিভিন্ন ডিজাইনের টাইলস ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে ঘরে আসে বৈচিত্র্যপূর্ণ সৌন্দর্য। এখন বাথরুম থেকে রান্নাঘর—সব ঘরের জন্যই আলাদা নকশা ও ধরনের টাইলস পাওয়া যাচ্ছে। ড্রয়িংরুমের মেঝে ও দেয়ালের জন্যও আছে বিশেষ টাইলস। বর্তমানে বাংলাদেশের টাইলসের বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। বাজারে দেশীয় উদ্যোক্তাদের অংশীদারত্ব প্রায় ৮৬ শতাংশ। তবে পরিমাণে কম হলেও আমদানি করা বিদেশি টাইলসের চাহিদা রয়েছে।
কোন ঘর কী ধরনের টাইলস দিয়ে সাজালে ভালো হবে? এ বিষয়ে কথা হয় ডিবিএল সিরামিকসের হেড অব মার্কেটিং দিদারুল আলম খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি গ্রাহকের রুচি এবং ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। ইন্টারনেট বা সরাসরি দোকানে গিয়ে ক্যাটালগস এবং রেফারেন্স দেখে তাঁরা ঘরে কোন ধরনের টাইলস ব্যবহার করবেন, সেটা ঠিক করতে পারেন। আর ডিবিএল সিরামিকসের টাইলস যদি তাঁরা নিতে চান, সেই ক্ষেত্রে আমাদের ডিসপ্লে সেন্টারে ঘুরে যেতে পারেন। কারণ, আমাদের ডিসপ্লে সেন্টারগুলো একটি ঘরের মতো করেই সাজানো। রেফারেন্স দেখলে আশা করি তাঁরা ধারণা পেয়ে যাবেন।’
বসার ঘরের দেয়ালের যেখানে টিভি থাকে, সেই দেয়ালও সাজানো যেতে পারে টাইলস দিয়ে। এই টাইলসে থাকতে পারে টেরাকোটার নকশা। এতে সুবিধাও আছে। দেয়ালের রং যেখানে মলিন হতে শুরু করে, সেখানে একবার ঠিকভাবে পরিষ্কার করলেই আবার পুরোনো সৌন্দর্য ফিরে পায় এই টাইলস।
শোয়ার ঘরে হালকা রঙের টাইলস ব্যবহার করা ভালো। দিন শেষে যখন শোবার ঘরে যাবেন, সাদা বা হালকা যেকোনো রঙের টাইলস আপনার মনে এনে দেবে প্রশান্তি।
বাথরুমের জন্য আকার অনুসারে টাইলস ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে হোমোজেনাস ও নন–স্লিপার টাইলস ব্যবহার করা উচিত।
আকারভেদে দেশীয় সিরামিকের ফ্লোর টাইলস প্রতি বর্গফুট ৬০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়ে থাকে। আর দেয়ালের টাইলসের প্রতি বর্গফুটের দাম ৪৫ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এর বেশি দামের টাইলসও রয়েছে বাজারে। সীমিত পর্যায়ে হলেও ছাদের টাইলসের কিছু চাহিদা রয়েছে।