'কার্যকারিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক'
মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ভয়াবহতা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেছেন, ভবিষ্যৎ অনিরাপদ হয়ে পড়ছে। ভবিষ্যতে এমন অবস্থা দাঁড়াবে যেখানে সেলফভর্তি অ্যান্টিবায়োটিক থাকবে, কিন্তু কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের পরিমাণ অনেক বেশি।
গত শুক্রবার রাতে নগরের রেডিসন ব্লু চিটাগং বে ভিউতে সিএসসিআর (প্রা.) লিমিটেড আয়োজিত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: বাস্তবতা, ভয়াবহতা ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক সায়েদুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ অপচিকিৎসক কিংবা অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তির পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে থাকেন। আর বছরে সাড়ে ৩৬ কোটি মানুষ দুই থেকে তিনবার বিভিন্ন দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে থাকেন। মাত্র ৫ কোটি মানুষ চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করেন। এভাবে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হতে থাকলে, ভবিষ্যতে কেউই নিরাপদ থাকবে না।
অধ্যাপক মুলকুতুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইমরান বিন ইউনুস, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ রিসার্চ সেন্টারের প্রধান অধ্যাপক মো. রিদওয়ানুর রহমান, দৈনিক আমাদের সময়ের উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল মোমেন, দৈনিক পূর্বকোণের পরিচালনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন চৌধুরী ও দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক।
সায়েদুর রহমান জানান, দেশে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার ওষুধের দোকান রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ অননুমোদিত। এসব দোকান প্রেসক্রিপশান ছাড়া ওষুধ বিক্রি করে। অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহারের ঝুঁকি সমগ্র বিশ্বকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলেছে।
তিনি বলেন, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমছে। এশিয়া মহাদেশে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হয়ে থাকে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
প্যানেল আলোচক এম এ ফয়েজ বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ হোক। সবাই যাতে এ ব্যাপারে সচেতন হয়।
সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘শিক্ষা–দীক্ষা ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে আছি আমরা। বিজ্ঞান পড়ানোর মতো শিক্ষকের অভাব রয়েছে। শিক্ষিত মানুষের মাঝেও বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে ওঠেনি। আর গবেষণায় আমরা পিছিয়ে। কিছু চিকিৎসকের কারণেও অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার বেড়েছে।’
ওয়াহিদ মালেক বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধ করতে হলে সরকারকে যক্ষা নিয়ন্ত্রণের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে জনগণের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি।