৩৩৩-এ সহায়তা চেয়ে উল্টো শাস্তি পাওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি
সরকারি তথ্যসেবা নম্বর ৩৩৩–এ কল করে খাদ্যসহায়তা চেয়ে উল্টো শাস্তি পাওয়ার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। ঘটনার প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শামীম ব্যাপারীকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ৩৩৩–এ কল করে খাদ্যসহায়তা চাওয়া ফরিদ আহমেদ চারতলা বাড়ির পুরো মালিক নন। চারতলা বাড়ির মালিক ছয় ভাই ও এক বোন। তিনি বাড়ির মাত্র তিনটি কক্ষের মালিক। এ কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) আজ রোববারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণে ফরিদ যে টাকা খরচ করেছেন, তা ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ ঘটনা কেন ঘটল, কী কারণে ঘটল; তা খুঁজে বের করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরিদ আহমেদকে কোন ফান্ড থেকে টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো একটি ঐচ্ছিক ফান্ড থেকে এ টাকা ফেরত দেওয়া হবে।
গত বুধবার ৩৩৩–এ কল করে খাদ্যসহায়তা চান সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের দেভোগ এলাকার ফরিদ আহমেদ। খাদ্য সহায়তা করতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন জানতে পারেন, সাহায্য চাওয়া ওই ব্যক্তি চারতলা বাড়ির মালিক এবং তিনি হোসিয়ারি কারখানার মালিক। তখন সদরের ইউএনও আরিফা জহুরা ৩৩৩–এ কল করে অযথা হয়রানি ও সময় নষ্ট করার দায়ে ফরিদ আহমেদকে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোকের মধ্যে খাদ্যসহায়তা বিতরণের নির্দেশ দেন।
ওই খাদ্যসহায়তা না করলে তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে; এই ভয়ে ঋণ, সোনা বন্ধক ও সুদের ওপর টাকা নিয়ে গতকাল শনিবার এই সহায়তা করেন ফরিদ। বিকেলে সদর উপজেলার কাশীপুর ইউনিয়নের দেওভোগ এলাকায় ফরিদের বাড়ির সামনে গিয়ে ওই খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন ইউএনও আরিফা জহুরা। খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেটের মধ্যে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ কেজি লবণ, আলু, পেঁয়াজ, তেল।
এর আগে গত বুধবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে সরকারি ত্রাণ চান ফরিদ। গত বৃহস্পতিবার খাদ্যসহায়তা করতে গিয়ে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন জানতে পারেন ফরিদ চারতলা বাড়ির ও একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক। তখন ইউএনও আরিফা জহুরা তাঁকে শাস্তি হিসেবে ১০০ গরিব লোককে খাদ্যসহায়তা করার নির্দেশ দেন।
ফরিদ গতকাল বলেন, ‘ওই চারতলা বাড়িটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আমরা ছয় ভাই ও এক বোন এই বাড়ির মালিক। আমি তিনতলার ওপর ছাদে টিনশেডের দুটি রুম ও নিচতলায় একটি রুম পেয়েছি। এ ছাড়া আমি মাসুদ আহমেদ নামের একটি হোসিয়ারি কারখানায় ১২ হাজার টাকা বেতনে কাটিংয়ের কাজ ও দেখাশোনা করি। আমার এক ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী এবং আমি নিজেও স্ট্রোক করেছি। আমার খাদ্য প্রয়োজন ছিল বলেই ফোন করেছি। পরদিন উপজেলা থেকে খাদ্যসহায়তা করা হবে জানান। তবে স্থানীয় কাশীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য আইয়ুব আলী আমাকে বলেন আপনি এই খাদ্য পাওয়ার উপযুক্ত নন, এই কথা বলে আমাকে নানাভাবে ধমকাতে থাকেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পর ইউএনও স্যার আসেন ও আমাকে নানা প্রশ্ন করার পর ১০০ মানুষকে সহায়তা করতে নির্দেশ দেন।’
ইউএনও আরিফা জহুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফরিদ নিজেই গত বৃহস্পতিবার আমাকে জানিয়েছিলেন তিনি চারতলা বাড়ির ও একটি হোসিয়ারি কারখানার মালিক। এখন ওই ব্যক্তির সম্পর্কে কথাবার্তা আসছে, তিনি চারতলা পুরো বাড়ির মালিক নন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’