২৫ দিন পর হিমঘর থেকে মেয়ে লাকিং মের লাশ পেলেন স্বজনেরা
দুই পক্ষের টানাটানিতে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে টানা ২৫ দিন ধরে পড়েছিল টেকনাফের চাকমাপল্লির মেয়ে লাকিং মে চাকমার (১৫) লাশ। আইনি জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে মেয়ের লাশ পেলেন স্বজনেরা। সোমবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের রামুর কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ মহাশ্মশানে সমাহিত করা হয় লাকিং মে চাকমার লাশ। এ সময় মা–বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার বেলা তিনটার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে লাকিং মে চাকমার লাশ হস্তান্তর করা হয়। লাশ গ্রহণ করেন লাকিং মের চাচাতো ভাই ক্যচিং মং চাকমা। লাশ হস্তান্তর করেন র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ানের উপপরিদর্শক (এসআই) অর্জুন চৌধুরী। অর্জুন চৌধুরী ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশে হিমঘরে পড়ে থাকা মেয়ের (লাকিং মে) লাশ মা–বাবাসহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লাকিং মে চাকমার বাড়ি টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় বাহারছড়া ইউনিয়নে। তাঁর বাবার নাম লাল অং চাকমা। লাকিং মে স্থানীয় শাপলাপুর উচ্চবিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত।
এক বছর আগে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় নিজ বাড়ি থেকে স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করে লাকিং মে চাকমাকে। পরে কুমিল্লায় নিয়ে জোর করে ধর্মান্তর, বাল্যবিবাহ এবং শেষে পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ পরিবারের।
গত ৯ ডিসেম্বর আতাউল্লাহর ঘরে মারা যান লাকিং মে। মারা যাওয়ার ১২ দিন আগে লাকিং মে জন্ম দেন একটি কন্যাসন্তান। নবজাতকের বয়স এখন ৩৭ দিন। আতাউল্লাহর বাড়িও একই ইউনিয়নের মাথাভাঙ্গা গ্রামে। তাঁর বাবার নাম নুর আহমদ। ৯ ডিসেম্বর থেকে লাশ হিমঘরে পড়ে ছিল।
এসআই অর্জুন চৌধুরী বলেন, তদন্তে লাকিং মে চাকমার বয়স নাবালিকা অর্থাৎ প্রচলিত আইনে বিয়ের উপযুক্ত হয়নি তার সত্যতা পাওয়া গেছে। তাই লাকিং মের বিয়ে হয়ে থাকলেও তার আইনগতভিত্তি নেই। সার্বিক বিবেচনায় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাঁর (লাকিংমে) শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এটি একটি অপহরণ মামলা হিসেবে আদালতে বিচার কার্য চলবে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শাহীন মো. আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতালের হিমঘরে মেয়েটির লাশ পড়ে ছিল। হিমঘরের ভাড়া এসেছে ২৪ হাজার টাকা। লাকিং মের পরিবার অসহায় ও দরিদ্র হওয়ায় ওই টাকা পরিশোধ করেছে র্যাব-১৫ কক্সবাজার কর্তৃপক্ষ।
বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে হিমঘর থেকে লাকিং মের লাশ গাড়িতে তোলে স্বজনেরা জন্মস্থান টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের চাকমাপল্লিতে না নিয়ে গাড়ি ছুটে উল্টোপথে রামুর দিকে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কক্সবাজার জেলা শাখার সহসভাপতি ক্য জ অং প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িতে নিরাপত্তা নেই, তাই রামুর কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ শ্মশানে (নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কে) লাকিং মে চাকমার লাশ সমাহিত করা হয়। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা–কর্মী, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষসহ নিহত নারীর পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
লাকিং মে চাকমার বাবা লালা অং চাকমার দায়ের করা মামলার আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেন, এখন আসামিদের গ্রেপ্তার ও অপহরণ মামলার বিচারকাজ শেষ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।