হাওরের বাঁধ তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ, অনশনে ৪ কৃষক
হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ এনে সুনামগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনে বসেছেন চার কৃষক। তাঁরা জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নাইন্দার হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজে অনিয়মের অভিযোগ করেন।
আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে কৃষকদের এ অনশন শুরু হয়েছে। কৃষকদের দাবি, বাঁধের কাজে অনিয়ম হওয়ার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো কাজ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা অনশনে বসেছেন।
অনশনে থাকা চার কৃষক হলেন দোয়ারাবাজার উপজেলার মাঝেরগাঁও গ্রামের আবদুন নুর (৭০), আবদুল জলিল (৬৫), আবদুর রউফ (৫৫) ও বড়বন গ্রামের আবদুল জলিল (৬০)। অনশন চলাকালে তাঁদের দাবির প্রতি সংহতি জানান হাওর বাঁচাও আন্দোলন ও জেলা ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা।
অনশনে থাকা কৃষকদের ভাষ্য, উপজেলার নাইন্দার হাওরে তাঁদের প্রায় ২০০ বিঘা জমি আছে। এই জমির ফসলের ওপর তাঁরা নির্ভরশীল। কিন্তু হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে অনিয়ম হওয়ায় ফসল ঝুঁকির মুখে। একাধিকবার এ নিয়ে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি।
কৃষক আবদুল জলিল বলেন, হাওরের বাঁধের কাজের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে (পিআইসি) কৃষকদের নাম থাকলেও পেছনে একটি প্রভাবশালী পক্ষ রয়েছে। তারাই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। পাউবো তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাঁরা ওই হাওরের ১ থেকে ১২ এবং ১৬ নম্বর প্রকল্পের কাজে অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।
সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, ‘এই হাওরের প্রতিটি প্রকল্প আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে পরিদর্শন করা হয়েছে। কোনোটিতেই কাজ ঠিকমতো হয়নি। কাজ হয়েছে যেনতেনভাবে। কোনো কোনো স্থানে পুরোনো বাঁধের ওপর নতুন করে মাটির প্রলেপ দেওয়া হয়েছে। আমার চাই, এসব প্রকল্পের কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি দুর্জয় দাশ বলেন, ‘সুনামগঞ্জের মানুষ বোরো ফসলের ওপর নির্ভরশীল। কোনো কারণে হাওরে ফসলডুবি হলে কৃষকদের কষ্টের সীমা থাকে না। আমরা ২০১৭ সালের মতো হাওরে বিপর্যয় চাই না। তাই ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে কোনো অনিয়ম-গাফিলতি সহ্য করা হবে না।’
এ ব্যাপারে পাউবোর দোয়ারাবাজার উপজেলার দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী মো. শমসের আলী জানান, নাইন্দার হাওরে ১৭টি প্রকল্প আছে। প্রায় দুই কোটি টাকার কাজ। কাজ প্রায় শেষ। কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। স্থানীয়ভাবে দুটি পক্ষ আছে। তাদের বিরোধের কারণেই এখন এসব অভিযোগ করা হচ্ছে।
শমসের আলী বলেন, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়ার পর সেখান থেকে পাঠানো একটি প্রতিনিধিদল সরেজমিনে কাজ দেখে দেছে। তারা কোনো কোনো অনিয়ম পায়নি।
সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলায় এবার ৭৪৪টি প্রকল্পে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ চলছে। ৬৩৩ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কার ও মেরামতে এবার অর্থ বরাদ্দের চাহিদা আছে ১৩১ কোটি। প্রতিটি প্রকল্পে একটি করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) কাজ করছে। গত বছর প্রকল্পে ৫৭২টি প্রকল্পে ব্যয় হয়েছিল ৮০ কোটি টাকা। এবার প্রকল্প ও অর্থ দুটোই বেড়েছে। হাওরে বাঁধ নির্মাণের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। পাউবো দাবি, এখন পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে আরও ১৫ দিন সময় বাড়ানোর জন্য গতকাল সোমবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
২০১৭ সালে সুনামগঞ্জের হাওরে বাঁধ ভেঙে ব্যাপক ফসলহানির পর পাউবো হাওরে বাঁধ নির্মাণে নতুন নীতিমালা করে। বাঁধের কাজ থেকে বাদ দেওয়া হয় ঠিকাদারদের। কাজে যুক্ত করা হয় জেলা প্রশাসনকে। এখন স্থানীয়ভাবে প্রকৃত কৃষক ও সুবিধাভোগীদের নিয়ে গঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। প্রতিটি পিআইসি একটি প্রকল্পে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকার কাজ করে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবার সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।