সাতক্ষীরা করোনা হাসপাতাল
স্বাস্থ্যবিধি অমান্য স্বজনদের
রোগীর সঙ্গে থাকছেন স্বজনেরা। তাঁরা আবার বাইরে যাচ্ছেন। এতে করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
করোনা ডেডিকেটেড সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বাইরের প্রধান ফটক। গত রোববার সকাল ১০টায়। ওই ফটকের সামনে দাঁড়ানো একটি ইজিবাইক। ওই বাইকে চড়ার জন্য দুজন দরদাম করছেন। সম্পর্কে তাঁরা বাবা ও মেয়ে। ওই তরুণী জানান, হাসপাতালে এসেছিলেন তাঁর মাকে দেখতে। ২৩ জুন তাঁর মা করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে হাসপাতালে। তিনিসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য রাতে হাসপাতালে থাকেন। সকালের দিকে তিনি ও তাঁর বাবা শহরের বাড়িতে যান। পরে মা–সহ অন্যদের জন্য খাবার নিয়ে আবার হাসপাতালে আসেন।
ওই দুজনের মতো অনেকে হাসপাতালে করোনা রোগীদের সেবা করছেন। বাইরে থেকে ওষুধ কিনেও আনছেন। খাবারও আনতেও বাইরে যাচ্ছেন তাঁরা। রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত হাসপাতালে এই চিত্র দেখা গেছে।
করোনা শনাক্ত হয়ে গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন সদর উপজেলার বাঁশদাহ গ্রামের ফিরোজা খাতুন। তাঁর শয্যার পাশে আছেন মেয়ে ও স্বামী। তাঁর স্বামী আবুল খায়ের বলেন, তিনি ভ্যানে করে বাড়িতে যাচ্ছেন খাবার আনতে।
কলারোয়া উপজেলার আলাউদ্দিন মিস্ত্রি মেয়েকে নিয়ে ২৪ জুন থেকে হাসপাতালে রয়েছেন। আলাউদ্দিন কয়েক দিন বাড়িতে যাননি। তবে তিনি খাবার ও ওষুধ কিনতে বাইরে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে ঘুরতে যাচ্ছেন হাসপাতালের আশপাশে।
হাসপাতালের তিনতলায় মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, ওয়ার্ডের প্রায় প্রত্যেক রোগীর শয্যার পাশে একাধিক মানুষ। মেঝেতে কেউ শুয়ে রয়েছেন। কেউ দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। একই অবস্থা পুরুষ ওয়ার্ডে। ওয়ার্ডের বাইরেও মানুষের ভিড়। তাঁরা সবাই করোনা রোগীদের স্বজন। কেউ রোগী দেখতে এসেছেন, আবার কেউ রোগীর সঙ্গে থাকেন।
দেবহাটার বসন্তপুর গ্রামের আকলিমা খাতুন বলেন, তাঁর মা করোনায় আক্রান্ত হয়ে চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তিনি প্রতিদিন বাড়িতে থেকে ইজিবাইক কিংবা মাহিন্দ্রতে করে যাতায়াত করেন। রাতে থাকেন মায়ের কাছে। মাঝেমধ্যে ওষুধ কিনতে শহরে যান।
হাসপাতালের তিনতলার চত্বরে দেখা হয় বন্দনা মিস্ত্রির (২৫) সঙ্গে। তাঁর পাশে বোন চন্দনা ও লতিকা। বন্দনা শ্বাসকষ্টের সমস্যায় রয়েছেন। তাঁদের বাড়ি প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে শ্যামনগর উপজেলার ভাঙ্গিয়া গ্রামে। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় চন্দনা দুই বোন নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খোদা বলেন, ২৫০ শয্যার এই হাসপাতালে প্রতিদিন ২৭০-২৮০ রোগী থাকছেন। একজন রোগীর সঙ্গে একাধিক স্বজন থাকেন। রোগীর সঙ্গে থাকা আবার বাইরে যাওয়া, এতে করোনার সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কুদরত-ই-খোদা আরও বলেন, রোগীর সঙ্গে একজনের বেশি থাকতে পারবেন না। তিনি বাইরেও যেতে পারবেন না। কিন্তু এ ধরনের প্রচারণা দেওয়া হলেও কেউ মানছেন না।