সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্থান নিয়ে জটিলতার অবসান

‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বিল গত বুধবার রাতে জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এটি দেখার হাওরপাড়ে স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিলটি পাস হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সুনামগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষজন গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

দেখার হাওর সুনামগঞ্জ সদর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত। এটি সুনামগঞ্জের সবচেয়ে বড় হাওর। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থাপনের সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার অবসান ঘটল।

সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) জেলা সভাপতি আইনুল ইসলাম বলেন, ‘সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, এতে আমরা খুবই আনন্দিত। এটিই হবে জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, জেলার সাংসদেরাসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি, এখন এটি বাস্তবায়নের কাজ দ্রুত শুরু হবে।’

গত ২ মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ বিল অনুমোদন লাভ করে। বিলটি ৭ সেপ্টেম্বর সংসদে উত্থাপিত হয়। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় বিশ্ববিদ্যালয়টি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। এ নিয়ে সুনামগঞ্জে বিতর্কের তৈরি হয়। এর পক্ষে-বিপক্ষে সুনামগঞ্জে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টি সদর উপজেলায় স্থাপনের দাবিতে গত ২৫ অক্টোবর জেলা শহরে সুনামগঞ্জ-৪ আসনের (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) সাংসদ পীর ফজলুর রহমানের নেতৃত্বে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়।

জানতে চাইলে সাংসদ পীর ফজলুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের দাবি ছিল, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের পরিবর্তে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হোক। এখন সংশোধনীতে “দক্ষিণ সুনামগঞ্জ” শব্দটি বাদ হয়ে “দেখার হাওরপাড়ে” হয়েছে। আমি মনে করি, এতে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর দাবি পূরণ হয়েছে।’

এখন দেখার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপযুক্ত একটি স্থান নির্ধারণ করবে।
মুহিবুর রহমান, সাংসদ, সুনামগঞ্জ-৫ আসন

অন্যদিকে সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে অভিনন্দন জানিয়ে ১১ নভেম্বর দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলায় ছাত্র-জনতার সমাবেশ হয়। এই অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ গত ১৩ অক্টোবর ঢাকায় বৈঠক করে। এতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে সুনামগঞ্জ সদর ও দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার মাঝামাঝি সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের আহসানমারা সেতুর পূর্ব পাশে দেখার হাওরপাড়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই প্রস্তাব জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে কমিটির সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের কাছে তুলে ধরেন। এ ছাড়া সুনামগঞ্জের চারজন সাংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ বিষয়ে সংসদে সংশোধনী প্রস্তাব দেন। বুধবার সংসদে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমানের প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

সুনামগঞ্জ-৫ আসনের (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) সাংসদ মুহিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুনামগঞ্জবাসীর কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। হাওর এলাকার মানুষের প্রতি তাঁর যে দরদ ও মায়া রয়েছে, সেটি আবারও প্রমাণিত হলো। এখন দেখার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ, ভৌগোলিক অবস্থান ও পারিপার্শ্বিক সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপযুক্ত একটি স্থান নির্ধারণ করবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও সুনামগঞ্জ-৩ আসনের (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) সাংসদ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

তবে এর আগে প্রথম আলোকে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, এটাই বড় কথা। এটি হাওরবাসীর জন্য জাতির জনকের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার। তিনি সুনামগঞ্জে মেডিকেল কলেজ দিয়েছেন। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় উড়ালসড়ক হবে, রেললাইন আসবে। আমরা এ জন্য কাজ করছি। যত দিন বাঁচি, সুনামগঞ্জের উন্নয়নে আমি কাজ করে যাব।’