সুজানগরে আ.লীগের বিরোধ বাড়ছে

পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উত্তাপ বাড়ছে। প্রতিটি ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী থাকায় দলের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে নির্বাচনের মাঠে কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। প্রায়ই ঘটছে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ১০ ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে দলীয় ১০ প্রার্থীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ২০ বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে আটজনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাব সমর্থন দিচ্ছেন। অন্যদিকে এই আট ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থীদের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান সমর্থন দিচ্ছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের এই বিরোধে পুরো উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাবের দাবি, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সাধারণ সম্পাদকের সমর্থনেই বিদ্রোহীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও উপজেলাব্যাপী আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বিভক্ত।

অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমান বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি। আওয়ামী লীগ যাঁকে সমর্থন দিয়েছে, আমিও তাঁকেই সমর্থন দিচ্ছি। এখানে বিদ্রোহীদের সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই আসছে না।’
১০ ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রায় প্রতিদিনই পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। ছোটখাটো মারামারির বেশ কিছু ঘটনাও ঘটেছে। রোববার রাতে মানিকহাট ইউনিয়নের বনখুলা বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. শফিউল ইসলামের সমর্থকদের সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্বাস মল্লিকের সমর্থকদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ পাওয়া যায়।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. শফিউল ইসলামের অভিযোগ, রাত ১০টায় তাঁর সমর্থকেরা ওই বাজারে প্রচার মাইক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। এ সময় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকেরা এসে তাঁদের ওপর হামলা চালিয়ে মাইক পুড়িয়ে দেন। এ সময় হামলার জবাব দিতে গেলে তাঁরা গুলিবর্ষণ করেন। এতে তাঁর (শফিউল) বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্রোহী প্রার্থী আব্বাস আলী সোমবার দুপুরে নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকেরাই তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়েছেন।

এদিকে ৬ নভেম্বর রাতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়নে। এদিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী শাহীন চৌধুরীর সমর্থকেরা স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈয়ব আলীর বাড়িতে হামলা চালান বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলাকারীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর বাড়ি ভাঙচুরসহ কয়েকটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে দুই পক্ষই ঘটনার জন্য পরস্পরকে দায়ী করেছেন।

জানতে চাইলে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিটি ঘটনাতেই পক্ষগুলো পরস্পরকে দোষারোপ করছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত পরিবেশ স্বাভাবিক।’

দ্বিতীয় ধাপে ১১ নভেম্বর উপজেলার ১০ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১০ ইউনিয়নে মোট ৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে নয়জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের ১০, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ৪ এবং জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির একজন করে প্রার্থী আছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন বিএনপির এক নেতা। বাকি ২০ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।