সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িসহ ১২টি ঘরে অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাট

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বসতঘর জ্বলছে। মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউপির কালিনগর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনিতে কৃষক লীগ নেতা মানিক সরদারের (৪০) জানাজা শেষে কবর দেওয়া হয় আজ মঙ্গলবার বিকেলে। জানাজা শেষে তাঁর সমর্থকেরা দল বেঁধে আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমানের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট চালান। পরে পেট্রল ঢেলে হাফিজুরের ঘরসহ ১২টি ঘর ও ১টি ইটভাটায় আগুন ধরিয়ে দেন।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। হত্যাকাণ্ড কিংবা অগ্নিসংযোগের দুটি ঘটনার একটিতেও এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। ঘরবাড়িতে আগুন ও লুটপাটের ঘটনায় পুরো ইউনিয়নে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে কালীনগর এলাকার পালরদী নদীর পাড় থেকে মানিক সরদারের লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত মানিক সরদার একই এলাকার আলমগীর সরদারের ছেলে। তিনি কালকিনি উপজেলা কৃষক লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ও মৎস্যজীবী লীগের সহসভাপতি ছিলেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মানিক সরদারের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে আজ বিকেলে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফন শেষে তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা আলিনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের বসতঘরে লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেন। পরে তাঁর সমর্থিত পাশের ১১টি বসতঘর ও ১টি ইউভাটায় পেট্টল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন তাঁরা। খবর পেয়ে মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ও বরিশালের গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন জেলার পুলিশ সুপার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা বলেন, সাবেক চেয়ারম্যানের বসতঘরসহ বেশ কয়েকটি ঘর ও ইটভাটায় আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। তাঁরা মনে করছেন, মানিককে সাবেক চেয়ারম্যান মিলন সরদারের লোকজন হত্যা করেছেন। কিন্তু আইন হাতে তুলে নেওয়া কারোরই ঠিক হয়নি। দুটি ঘটনার এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব না হলেও অভিযান চলছে।

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক নুর মোহাম্মদ শিকদার বলেন, আগুনে খবর পেয়ে মাদারীপুর ও গৌরনদী ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট চার ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনেন। একাধিক স্থানে আগুনের ঘটনা থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

কালকিনি থানা–পুলিশ সূত্র জানায়, গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে মানিক সরদারের মুঠোফোনে একটি ফোন আসে। পরে তিনি মোটরসাইকেলে করে কালকিনি সদরের উদ্দেশে রওনা হন। পালরদী নদীর পাড়ে পৌঁছানোর পর দুর্বৃত্তরা তাঁর গতি রোধ করে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন। মানিকের চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। মানিককে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে এলে দায়িত্বরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ধাপে কালকিনি উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাহিদ পারভেজের সমর্থক ছিলেন নিহত মানিক সরদার। নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন ওই ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সরদার। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা নিয়ে হাফিজুর রহমানের সঙ্গে মানিকের বিরোধ ছিল। এই বিরোধের জেরেই হাফিজুরের নির্দেশে মানিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ নিহত মানিক সরদারের স্বজনদের।
মানিক সরদারের স্ত্রী সীমা খানম বলেন, ‘আমার স্বামীকে ওই মিলন সরদারই (হাফিজুর রহমান) হত্যা করেছে। তিনি নির্দেশ ছাড়া আমার স্বামীকে কেউ মারতে পারে না। আমার স্বামীকে যারা মেরেছে, আমি তাদের বিচার চাই।’

ঘটনার পর থেকে হাফিজুর রহমানকে এলাকায় দেখা যায়নি। তাঁর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর কয়েকজন প্রতিবেশী বলেন, হাফিজুর রহমান ঢাকায় আছেন। তাঁর পরিবারের লোকজন ঘরছাড়া।