সাতক্ষীরা শহর: যানজটে ধুঁকছে লাখ মানুষ
যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, সড়কের প্রস্থ কম হওয়াসহ চার কারণে সাতক্ষীরা শহরে তীব্র যানজট হচ্ছে। যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ যেতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগছে। এ কারণে নগরবাসীর একদিকে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে তারা ভোগান্তি পোহাচ্ছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পৌরসভায় ২০১ কিলোমিটার পাকা সড়ক আছে। শহরের মধ্যে পড়েছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পৌর এলাকায় সড়কের প্রস্থ অনেক কম। সড়কের পাশে নেই ফুটপাত। তা ছাড়া সড়কে যত্রতত্র বাস, অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো হয়। এসব কারণে সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে।
চার কারণে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে
বাস, অটোরিকশা দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের ওঠানো ও নামানো
অবৈধভাবে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত ভ্যান চলাচল
সড়কের প্রস্থ কম হওয়া এবং পাশে ফুটপাত না থাকা
যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, সড়কের দুই পাশ দিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি দখল করে রেখেছে অনেক জায়গা। সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য যানবাহন অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে। এতে শহরে যানজট হচ্ছে। শহরের শহীদ নাজমুল সরণি, শহীদ কাজল সরণি, শহীদ সিরাজ সরণি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বর থেকে ইটেগাছা পর্যন্ত, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের নিউ মার্কেট থেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত, তুফান মোড়, সুলতানপুরের কেষ্টময়রার মোড়, বড়বাজার মোড়, পুরোনো সাতক্ষীরায় যানজট বেশি থাকে।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরে অবস্থান করে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়ক ও সাতক্ষীরা-যশোর সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট চলছে। যানজটের কারণে যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকায় যাত্রীরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ফুটপাত না থাকায় মানুষ হেঁটেও যাতায়াত করতে পারছে না।
সাতক্ষীরা সদরের সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী ও নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের নেতা আবিদুর রহমান জানান, বর্তমানে সাতক্ষীরা পৌরসভার সড়কের প্রস্থ ১৮ থেকে ২০ ফুট। যেভাবে জনসংখ্যা বেড়েছে ও শহরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে তাতে সড়কের প্রস্থ ৩৩ ফুট করা দরকার।
সাতক্ষীরা শহরের ব্যবসায়ী অহিদুল ইসলাম জানান, সাতক্ষীরা শহরে একবার কেউ এলে আর আসবে না। যানজটের কারণে ১০ মিনিটের পথ যেতে দিনের বেলায় সময় লাগে ১ ঘণ্টা। উপরন্তু সড়কে ধুলা ওড়ার কারণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
শহরের ব্যবসায়ী কাজী আনিসুজ্জামান জানান, ধুলার কারণে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠান খোলার পর থেকে ধুলোয় বসা যায় না।
সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, সাতক্ষীরা শহরে এক দশকে লোকসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ । সেই সঙ্গে যানবাহন বেড়েছে। কিন্তু সড়কের প্রস্থ বাড়েনি। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে ঘরবাড়ি। বর্তমানে ছোট্ট এ শহর ঘিরে চার হাজারের মতো ইজিবাইক চলে। ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চলে তার চেয়ে বেশি। তিনি আরও বলেন, খাল খননের মাটি ইচ্ছামতো শহরের প্রধান সড়কের ওপর দিয়ে পরিবহন করা হচ্ছে। এতে সড়কে মাটি পড়ে ধুলার সৃষ্টি হচ্ছে।এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাসকিন আহমেদ জানান, শহরে ৬৯৫টি নিবন্ধিত ইজিবাইক রয়েছে। কিন্তু চলছে তার কয়েক গুণ বেশি। নিবন্ধন না থাকার পরও ইঞ্জিচালিত ভ্যান চলছে। এসব আটকাতে গেলে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
শহরে যানজট বেড়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে মেয়র তাসকিন আহমেদ বলেন, যেসব এলাকায় যানজট বেশি হয় সেসব এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যানজট দূর করতে সড়কের প্রস্থ ২৪ ফুট করা হয়েছে।