সাংসদ–মেয়রের রণে আতঙ্কে মানুষ

নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও সৈয়দ রফিকুল ইসলাম

ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র আর স্থানীয় সাংসদের ছেলের মধ্যে বিরোধ চরমে উঠেছে। এর মধ্যেই দুই পক্ষ সংঘাতে জড়িয়েছে। গতকাল সোমবার মেয়রের সমর্থকেরা পৌর শহরে আধা বেলা হরতাল পালন করেছেন। স্থানীয় লোকজন বলছেন, দুই মহারথীর রণে গৌরীপুরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমানকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। মূলত এ হত্যার পর থেকেই সাংসদের ছেলে ও মেয়রের মধ্যে বিরোধের শুরু হয়। মাসুদুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এ কারণে মাসুদুর হত্যাকাণ্ডে সৈয়দ রফিকুলের সম্পৃক্তা রয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। মেয়রের অভিযোগ, রাজনৈতিক বিরোধীদের ইন্ধনে মামলায় তাঁকে আসামি করা হয়। আসামি হওয়ায় রফিকুল দলীয় মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন পান সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম। তাঁর পক্ষে বড় ভূমিকা পালন করেন সাংসদের ছেলে তানজির আহমেদ। পরবর্তী সময়ে মেয়র ও তানজিরের মধ্যে বিরোধ আরও তীব্র হয়।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নাজিম উদ্দিন আহমেদ গৌরীপুরের সাংসদ হওয়ার পর থেকে তাঁর ছেলে তানজির নিজের আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টায় রয়েছেন। এ জন্য বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কমিটিগুলোতে নিজের পছন্দের লোকদের বসাতে শুরু করেন। মেয়র রফিকুল হত্যা মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে তানজিরের সমর্থকেরা তাঁকে (মেয়র) কোণঠাসা করে রাখেন। পৌর নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর মেয়র নিজের বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি। ৩০ জানুয়ারি নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁর সমর্থকেরা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন।

পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

মেয়রের ওপর হামলার প্রতিবাদে সোমবার দুপুরে গৌরীপুর পৌর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। সাংসদ ও তাঁর ছেলের সঙ্গে বিরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে কারও সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করিনি। সাংসদ ও তাঁর ছেলে নির্বাচনের সময় আমাকে নানাভাবে কোণঠাসা করে রেখে হারানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এরপরও আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। এখন সাংসদের ছেলের লোকজন আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করেছেন। আমি না করার পরও সমর্থকেরা এর প্রতিবাদ করছেন।’

আর সাংসদের ছেলে তানজির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়র হত্যা মামলার আসামি হওয়ায় সংগত কারণেই আমরা তাঁর সঙ্গে থাকতে পারি না। এ কারণে আমরা আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে শুরু থেকেই সমর্থন করেছি। মূলত এ কারণেই মেয়র ও তাঁর সমর্থকেরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা করে।’