শ্রীপুরের সাফারি পার্কে শুধু জেব্রা নয়, মারা গেছে বাঘও
গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আগের ১০টির পর আরও ১টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। জেব্রার মৃত্যুর বিষয়ে তদন্ত করছে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি। এ বিষয়ে তদন্ত চলাকালে জানা গেল, সেখানে একটি বাঘও মারা গেছে। বাঘের মৃত্যুর এ তথ্য আজ রোববার দুপুরে জানান সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির।
বাঘের মৃত্যুর তথ্য এর আগে গণমাধ্যমকে জানায়নি সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ। আজ জেব্রার মৃত্যুর বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার সময় বাঘের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ পায়। গোপন সূত্রে পাওয়া বাঘের মৃত্যুর খবরটি সঠিক কি না, তা প্রকল্প পরিচালকের কাছে জানতে চান স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেন। এরপর বাঘের মৃত্যুর সংবাদটি জানতে পারে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট লোকজন। আজ দুপুরে জেব্রার মৃত্যুর বিষয়ে সাংসদ সাফারি পার্ক পরিদর্শন করার সময় বিষয়টি সামনে আনেন। সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ তখন জানায়, ১২ জানুয়ারি বাঘটির মৃত্যু হয়। পার্ক প্রতিষ্ঠাকালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছিল এটি। রোগাক্রান্ত হয়ে দেড় মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকার পর বাঘটির মৃত্যু হয়েছে।
বাঘের মৃত্যুর বিষয়ে পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. জাহিদুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, বাঘটি অনেক দিন ধরেই পায়ে সংক্রমণ নিয়ে ঘোরাফেরা করছিল। মাস দেড়েক আগে এর অবস্থা কিছুটা খারাপের দিকে গেলে উন্নত চিকিৎসার আওতায় আনা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বাঘটির চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটিকে আর বাঁচানো যায়নি। এটির শরীরের নমুনা পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। কোন রোগে আক্রান্ত ছিল, তা এখনো জানা সম্ভব হয়নি।
জেব্রার মৃত্যুর বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে মন্ত্রণালয়। কমিটির অন্যরা হলেন একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় পশু হাসপাতালের সাবেক প্রধান কর্মকর্তা এ বি এম শহীদুল্লাহ, বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল এইচ খান।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ১১টি জেব্রার মৃত্যু হয়েছে। জেব্রার পাল ছিল ৩১ সদস্যের। এখন ২০টি জেব্রা আছে। এ ছাড়া টাইগারবেষ্টনীতে ১০টি বাঘের মধ্যে ১টির মৃত্যুর পর সদস্যসংখ্যা হলো ৯।
সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, মৃত জেব্রার ময়নাতদন্ত ও শরীরের নমুনা পরীক্ষার পর তাঁরা জানতে পেরেছেন যে এগুলোর মধ্যে চারটির মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে। বাকি সাতটি মারা গেছে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে। তবে জেব্রার চারণভূমিতে জন্মানো ঘাস ও সরবরাহ করা ঘাসের উৎসস্থল নিয়েও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে।
একে একে ১১টি জেব্রার মৃত্যু ও বাঘের মৃত্যুর তথ্য গোপন রাখার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘তাঁদের (সাফারি পার্কের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) স্বপদে বহাল রেখে তদন্ত করলে তদন্ত কমিটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করতে পারবে না। তাঁদের ওএসডি করে তদন্ত করা হোক।’
আজ বেলা একটার দিকে মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কাজ করছে। যে জেব্রাগুলো মারা গেছে, সেগুলোর মৃত্যুর কারণ ও ভবিষ্যতে এ ধরনের বিপর্যয় মোকাবিলায় করণীয় নিয়ে কাজ করছে তারা।