শিক্ষকের ৬৫টি পদ শূন্য, ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ১৫১ শিক্ষক পদের মধ্যে ৬৫টি পদই শূন্য রয়েছে। দুটি বিভাগে একজন শিক্ষকও নেই। আর নয়টি বিভাগ চলছে একজন শিক্ষক দিয়ে। অধ্যাপকের ২৩টি পদ থাকলেও বর্তমানে শূন্য ১৬ টি। শিক্ষক সংকটের কারণে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান।
‘অতিথি শিক্ষক’ দিয়ে চলছে কোনো কোনো বিভাগ। শিক্ষক শূন্য দুটি বিভাগ হলো পেডিয়ট্রিক সার্জারি ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি। আর একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে ফরেনসিক মেডিসিন, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন, রেডিও থেরাপি, রেসপিরেটরি মেডিসিন, দন্ত, হেপাটোলজি, হেমাটোলজি, এন্ডোক্রাইনোলজি এবং স্পোর্টস মেডিসিন অ্যান্ড অর্থ্রোস্কোপি।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ সালে স্থাপিত শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে বর্তমানে এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়াও পাঁচটি বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রি এবং এমডি এবং এমফিল কোর্স করানো হয়। এমবিসিএস কোর্সে প্রতি শিক্ষাবর্ষে দেশি-বিদেশি মিলে আসনসংখ্যা ১৬০। এ ছাড়া ডিপ্লোমা কোর্স চালু রয়েছে ডিপ্লোমা ইন চাইল্ড হেলথ (সিসিএইচ), ডার্মাটোলজি অ্যান্ড ভেনেরিওলজি, ডিপ্লোমা ইন অর্থোপেডিকস পাঁচটি বিষয়ে। এমডি কোর্স চালু রয়েছে ডক্টরস অব মেডিসিন এবং ইন্টারনাল মেডিসিন বিষয়ে। এ ছাড়া ফিজিওলজি বিষয়ে এমফিল চালু রয়েছে। সব কোর্স মিলিয়ে কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা বর্তমানে প্রায় এক হাজার। এর মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়াও এমবিবিএস কোর্সে ভর্তি রয়েছেন ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, কাশ্মীরসহ বিদেশি অনেক শিক্ষার্থী। কলেজে ৩৭ বিভাগে বর্তমানে শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫১ টি। ১৭ বিভাগে অধ্যাপকের কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। কলেজে অধ্যাপকের মোট ২৩টি পদ থাকলেও ১৬ পদই শূন্য।
পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগে সহযোগী এবং সহকারী অধ্যাপকের দুটি পদ থাকলেও তা দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বর্তমানে শিক্ষক ছাড়াই চলছে এই বিভাগটি। একই চিত্র পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগেও। এই বিভাগে সহযোগী এবং সহকারী অধ্যাপকের দুটি পথ থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে এসব পদে শিক্ষক নেই।
অ্যানাটমি বিভাগে একজন অধ্যাপকের পদ শূন্য রয়েছে। ফিজিওলজি বিভাগে অধ্যাপকের একটি, সহযোগী অধ্যাপকের দুটি এবং সহকারী অধ্যাপকের একটি পদ শূন্য রয়েছে। আর প্রভাষকের চারটি পদের একটি শূন্য রয়েছে। বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে প্রভাষকের একটি পদ শূন্য রয়েছে। কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং সহকারী অধ্যাপকের তিনটি পদই শূন্য রয়েছে। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ চলছে একজন মাত্র প্রভাষক দিয়ে। এই বিভাগে শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় লাশের ময়নাতদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ওই বিভাগ সূত্র জানায়, সেখানে অধ্যাপকের পদ ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট থেকে শূন্য। সহযোগী অধ্যাপকের পদ শূন্য ২০১৫ সালের ৬ আগস্ট থেকে। অপরদিকে সহকারী অধ্যাপকের পদ শূন্য ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর থেকে। প্রভাষকের দুটি পদ শূন্য চলতি বছরের ২ ও ১৩ জুলাই থেকে। একমাত্র প্রভাষক ওয়াহিদ ওমরের পদও আগামী মাসে শূন্য হওয়ার কথা।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ফার্মাকোলজি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। প্যাথলজি বিভাগে অধ্যাপকের একটি এবং প্যাথলজিস্টের দুটি পদ শূন্য রয়েছে। মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের দুটি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের একটি করে পদ শূন্য রয়েছে। শিশু বিভাগে অধ্যাপকের একমাত্র পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ডার্মাটোলজি বিভাগে অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদ শূন্য রয়েছে। সাইকিয়াট্রি বিভাগে শূন্য সহকারী অধ্যাপকের দুটি পদ। কার্ডিওলজি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের একটিমাত্র পদ থাকলেও তা শূন্য রয়েছে। সার্জারি বিভাগে অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদ শূন্য রয়েছে দীর্ঘদিন।
চক্ষু বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদই শূন্য। সহকারী অধ্যাপকের তিনটি পদের মধ্যে একটি ফাঁকা। নাক কান গলা বিভাগে অধ্যাপকের একটিমাত্র পদ শূন্য। অধ্যাপক পদ শূন্য অর্থোপেডিক সার্জারি বিভাগেও। এই বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের তিনটি পদের মধ্যে দুটি ফাঁকা দীর্ঘদিন ধরে।
অবস অ্যান্ড গাইনী (প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ) বিভাগে অধ্যাপকের একমাত্র পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সহযোগী অধ্যাপকের তিনটি পদের মধ্যে দুটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। অধ্যাপকের পদ শূন্য ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগেও। এই বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের পদটিও শূন্য রয়েছে। গোটা বিভাগ চলছে একমাত্র সহকারী অধ্যাপক সাবরিনা ইয়াসমিনকে দিয়ে।
রেডিওলজি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের একটি পদ শূন্য রয়েছে। রেডিওথেরাপি বিভাগ চলছে একমাত্র সহকারী অধ্যাপক মোবাশ্বের-উর-রহমানকে দিয়ে। এ্যানেসথেসিওলজি বিভাগে অধ্যাপকের একমাত্র পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ চলছে একমাত্র সহকারী অধ্যাপক জীবেশ কুমার প্রামাণিককে দিয়ে। ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপকের একমাত্র পদ শূন্য রয়েছে। কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শূন্য বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপকের পদটি। দন্ত বিভাগে দুটি পদের মধ্যে সহকারী অধ্যাপকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। নিউরো সার্জারি বিভাগে সহকারী অধ্যাপকের একটি পদ ফাঁকা রয়েছে। একমাত্র সহকারী অধ্যাপক দিয়ে চলছে হেপাটোলজি বিভাগ। হেমাটোলজি বিভাগে (রক্তরোগ) তিনটি পদের মধ্যে অধ্যাপক এবং সহযোগী অধ্যাপকের দুটি পদ শূন্য রয়েছে। একমাত্র সহযোগী অধ্যাপক দিয়ে চলছে এন্ডোক্রাইনোলজি ও স্পোর্টস মেডিসিন অ্যান্ড অর্থ্রোস্কপি বিভাগ।
উপাধ্যক্ষ রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে। দুটি বিভাগ শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়েছে। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগ চলছে একজন মাত্র শিক্ষক দিয়ে। শিক্ষক সংকট নিরসনের জন্য প্রত্যেক মাসেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রতিবেদন পাঠানো হচ্ছে। অনেক বিভাগে অধ্যাপকের পদ নেই। সেসব বিভাগে পদ সৃষ্টি করে পদায়ন করা প্রয়োজন। আবার গোটা কলেজজুড়ে ২৩ জন অধ্যাপকের পদ থাকলেও ১৬ পদই শূন্য। ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে অধ্যাপকের শূন্য পদে দ্রুত পদায়ন প্রয়োজন।