শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ চাহিদার শিক্ষার্থীদের আবাসনসুবিধা চালু
বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) শিক্ষার্থীদের ভর্তির আসন সংরক্ষিত আছে, কিন্তু তাঁদের জন্য বিশেষ আবাসনসুবিধা ছিল না। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রায় তিন দশকের মাথায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসনসুবিধা চালু করা হয়েছে।
আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান আবাসিক হলে বিশেষ এই আবাসনসুবিধার কক্ষের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলা হয়, বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এটিই প্রথম কোনো আবাসনব্যবস্থা, যেখানে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সব সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি আবাসিক হলে এ সুবিধা সম্প্রসারণ করা হবে। অনেকটা সেবার মনোভাব থেকে কাজটি করা হয়েছে। এই আবাসনসুবিধা দেখে দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এ কাজ করতে সহায়তা চাইলে শাহজালল বিশ্ববিদ্যালয় স্বেচ্ছায় সহায়তা দেবে।
১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তির সুবিধা সংরক্ষিত রাখা হয়। কিন্তু তাঁদের জন্য কোনো বিশেষ আবাসনসুবিধা ছিল না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের আবাসনসুবিধা নিয়ে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীরা বসবাস করতেন। পাঁচটি আবাসিক হলের মধ্যে ৪০০ শিক্ষার্থীর আবাসনসুবিধাসম্পন্ন শাহপরান হলের নিচতলার একটি কক্ষকে নতুন করে সাজানো হয়। এতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন চার শিক্ষার্থীর জন্য কক্ষটি বরাদ্দ করা হয়েছে।
কক্ষটি উদ্বোধনকালে উপাচার্য ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানের করতে যেসব সুবিধা দেওয়া দরকার, তা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। বর্তমানে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি শতভাগ রয়েছে। বিশেষায়িত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাতে আবাসনব্যবস্থা নিয়ে চিন্তায় না ভোগেন, সে জন্য আন্তর্জাতিক মানের বিশেষ রুমের ব্যবস্থা করেছি। এখানে শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে।’
বিশেষায়িত আবাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উপাচার্য আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য সরকারের কাছে যখন যা চাওয়া হয়েছে, তা–ই পাওয়া গেছে। সরকার ও ইউজিসির আন্তরিক সহযোগিতায় বর্তমানে তাঁরা এ অবস্থানে এসেছেন।
উদ্বোধনের পর হলে গিয়ে দেখা যায়, প্রবেশপথে হুইলচেয়ার ওঠানামার উপযোগী বিশেষ র্যাম্প তৈরি করা। ডেডিকেটেড ওয়াশরুম, বিশেষ প্রয়োজনে রুম রয়েছে। এ কক্ষ থেকে হলের অফিসকক্ষে জরুরি যোগাযোগের জন্য প্রযুক্তিগত বিশেষ ব্যবস্থা আছে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার উপযোগী বিশেষভাবে তৈরি আসবাবও আছে সেখানে। কক্ষের বিছানা, পড়ার টেবিল আলাদা করা। কক্ষে প্রতিটি শয্যার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে একটি করে হুইলচেয়ার। তাতে বসে শৌচাগারে যাওয়া-আসা, চলাফেরা ও বাইরে বের হওয়ার ব্যবস্থা আছে। শৌচাগারের দেয়ালজুড়ে আছে সাপোর্টিং রেলিং। জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের ব্যবস্থাও রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল শাখার সঙ্গে স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কক্ষ প্রস্তুতের কাজে স্বেচ্ছায় সহায়তা করেছেন বলে জানালেন শাহপরান হলের প্রাধ্যক্ষ মো. মিজানুর রহমান খান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হলগুলো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উপযোগী না হওয়ায় তাঁরা সাধারণত হলে থাকতে চান না। কিন্তু তাঁদের অন্য শিক্ষার্থীদের ন্যায় সমান সুযোগসুবিধা পাওয়ার কথা। তাই এই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাঁদের হলে থাকার উপযোগী বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর বিশেষ চাহিদার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের যেন কোনো ধরনের চিন্তা করতে না হয়, সে দিকে সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানান প্রাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান খান। তিনি আরও বলেন, একটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য যেসব সুবিধা থাকা দরকার, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হলে থেকে তাঁদের পড়াশোনার পরিবেশ পরিবারের সান্নিধ্যে থাকার মতো হবে, এটাই তাঁদের চাওয়া।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যাঁরা হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন, তাঁদের সংখ্যা ১২। এর মধ্যে শাহপারান হলে ৪০০ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থাকছেন ৪ জন। এই হলে প্রথম বিশেষায়িত কক্ষে এই চারজন বসবাস করবেন বলে জানিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।