ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথ
লোকাল ট্রেন বন্ধ, বিপাকে ২২ স্টেশনের যাত্রীরা
বর্তমানে একটি আন্তনগর ট্রেন চললেও মাত্র তিনটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়। ভাড়াও তিন গুণ বেশি।
করোনা অতিমারির সময়ে সবকিছু ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লোকাল ট্রেন চালু হয়নি। ফলে বিপাকে পড়েছে ময়মনসিংহ-ভৈরব রুটের নিম্ন আয়ের মানুষ। এ রুটে প্রতিদিন চারটি লোকাল ট্রেন চলাচল করত। বর্তমানে একটি আন্তনগর ট্রেন চললেও মাত্র তিনটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেয়, ভাড়াও তিন গুণ বেশি।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষজনের ভরসা লোকাল ও মেইল ট্রেন, যা প্রায় আট মাস ধরে বন্ধ। ময়মনসিংহ-ভৈরব রুটে চারটি লোকাল ট্রেনের পাশাপাশি ঈশা খাঁ এক্সপ্রেস নামে একটি মেইল ট্রেন ছিল। সেটিও বন্ধ। এসব ট্রেন ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ জেলার ২২টি স্টেশনের যোগাযোগ রক্ষা করত। ফলে খুব সহজে সাধারণ মানুষজন স্বল্প ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারত।
রেলওয়ে সূত্রমতে, লোকাল ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া জনপ্রতি পাঁচ টাকা এবং মেইল ট্রেনে ১৫ টাকা। আর আন্তনগর ট্রেনে সর্বনিম্ন ভাড়া ৪৫ টাকা। ১১৬ কিলোমিটার দূরত্বের ময়মনসিংহ-ভৈরব রেলপথে লোকাল ট্রেনের জন্য নির্ধারিত ভাড়া ৪০ টাকা এবং মেইল ট্রেনের জন্য ৫৫ টাকা। বিপরীতে আন্তনগর ট্রেনে উঠলে একজন যাত্রীকে গুনতে হয় ১২৫ টাকা।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, লোকাল ট্রেনগুলো প্রতিটি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করত। ফলে স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা যেত। ফলে ব্যবসায়ী ও পাইকারেরা দুধ, ডিম, কলা, মুরগি, ফল, শাকসবজিসহ বিভিন্ন কৃষিজ পণ্যের পাশাপাশি কাপড়, জুতা, কসমেটিকস, চাটাইসহ বিভিন্ন মনিহারি পণ্য আনা-নেওয়া করে বিভিন্ন বাজারে তা সরবরাহ করতেন।
লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতে অর্থনৈতিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধের প্রভাবে স্টেশনকেন্দ্রিক দোকান ও খাবার হোটেলগুলোর ব্যবসাতে ভাটা পড়েছে। ট্রেনগুলোর ওপর নির্ভরশীল হকার, কুলিরাও পরিবার নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন।
জুয়েল মিয়া বলেন, তিনি প্রতিদিন লোকাল ট্রেনে করে সোহাগী থেকে ময়মনসিংহ শহরে বিক্রির জন্য বিভিন্ন কৃষিপণ্য নিয়ে আসতেন। এখন তাঁকে সড়কপথে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাওয়ায় তিনি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
হেদায়েত উল্লাহ নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, তিনি প্রতিদিন ময়মনসিংহ থেকে আঠারবাড়ি যাওয়া-আসা করেন। সড়কপথে ভাড়া এবং পণ্য পরিবহনের ঝামেলা দুটোই বেশি।
ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি শঙ্কর সাহা বলেন, লোকাল ট্রেনকে ঘিরে ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়। স্বল্প দূরত্বে চলাচলকারী এবং নিম্ন আয়ের মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে পুনরায় লোকাল ট্রেনগুলো চালু করার পক্ষে মত দেন তিনি।
ময়মনসিংহ স্টেশন সুপার জহুরুল ইসলাম জানান, ট্রেনগুলো চালু হলে সবাই উপকৃত হতো। তবে ট্রেন চালু হওয়ার বিষয়টি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর। রেল ভবন থেকে ঘোষণা এলে পুনরায় এই ট্রেনগুলো চালু করা হবে।