লিচুর রাজ্যে মৌ চাষ
>* গুরুদাসপুর উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে ২০০টি বাগান রয়েছে
* এসব বাগানে ৮৫ জন খামারি আট হাজার মৌ বাক্স বসিয়েছেন
চারদিকে লিচুর বাগান। গাছে ধরেছে মুকুল। চারপাশে মিষ্টি গন্ধ। লিচুর উৎপাদন বাড়াতে বাগানে বাগানে চাষিরা বসিয়েছেন মৌমাছির ‘মৌ বাক্স’। সেখান থেকে দলে দলে মৌমাছির ঝাঁক বসছে লিচুর মুকুলে।
ধানের পরেই লিচুর আবাদে খ্যাতি রয়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায়। লিচুর বাগানে মৌমাছি চাষে মৌ খামারি ও লিচুচাষি দুপক্ষই লাভবান হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম বলেন, লিচুর মুকুলে মৌমাছি বসলে পরাগায়ন ভালো হয়। ফলে ওই গাছে বা বাগানে লিচুর ফলন বাড়ে। একই সঙ্গে লিচুর আকার-আকৃতিও বাড়ে। ১০ বছর ধরে এ পন্থা অনুসরণ করে লাভবান হচ্ছেন লিচু–বাগানের মালিক ও মৌ খামারিরা।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, উপজেলার নাজিরপুর, বিয়াঘাট, চাপিলা ইউনিয়নসহ উপজেলাজুড়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিক মোজাফ্ফর, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি জাতের লিচুর আবাদ হয়ে থাকে। উপজেলায় ৪১০ হেক্টর জমিতে ২০০টি বাগান রয়েছে। এসব বাগানে ৮৫ জন খামারি আট হাজার মৌ বাক্স বসিয়েছেন। মাত্র তিন সপ্তাহে (মার্চের শুরু থেকে তৃতীয় সপ্তাহ) প্রতিটি মৌ বাক্সে সাড়ে তিন থেকে চার কেজি মধু হয়। গড়ে ৩০ মেট্রিক টন মধু আহরণ হয়ে থাকে।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার নাজিরপুর ও বিয়াঘাট ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গাছে গাছে মুকুল গন্ধ ছড়াচ্ছে। সেসব গাছের নিচে ৫০ থেকে ৬০টি করে মৌ বাক্স বসিয়েছেন খামারিরা। মৌমাছির দল গাছে গাছে বসেছে। আবার উড়ে এসে বসছে মৌ বাক্সে।
মৌ খামারি মিলন হোসেন, দিলীপ দাস, সুবল দাস ও আবদুল করিম বলেন, বাগানে তাঁরা শতাধিক ছোট–বড় কাঠের বাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি বাক্সে একটি রানি মৌমাছি, একটি পুরুষ মৌমাছি ও অসংখ্য কর্মী (এপিস মেলিফেরা জাতের) মৌমাছি রয়েছে। কর্মী মৌমাছিরা ম–ম গন্ধে ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে যায় লিচুর মুকুলে। পরে মুকুল থেকে মধু সংগ্রহ করে নিজ নিজ কলোনিতে মৌচাকে এনে জমা করে।
খামারিরা বলেন, সরিষার মধুর দাম বেশি থাকে। লিচুর মধু বাড়তি উপার্জন তাঁদের। স্থানীয় চাষি ছাড়াও সাতক্ষীরা, সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, পাবনাসহ দেশের অনেক জেলা থেকেও মৌচাষিরা আসেন মধু সংগ্রহে। ছোট–বড় নানা আকৃতির মৌমাছির বাক্স বসিয়ে বৈজ্ঞানিক উপায়ে মধু সংগ্রহ করেন তাঁরা।
নাজিরপুর ইউনিয়নের পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচুচাষি মো. আবদুস সালাম বক্স ও সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২০০৮ সাল থেকে নাজিরপুর ইউনিয়নে স্বল্প পরিসরে লিচুর আবাদ শুরু হয়েছিল। এখন উপজেলাজুড়েই বাণিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ হচ্ছে। শুরুতে লিচুর উৎপাদন ভালো ছিল না। কিন্তু সাত বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে লিচু চাষে সফলতা পাচ্ছেন চাষিরা। কীটনাশকের চেয়ে মৌমাছির পরাগায়নপদ্ধতি লিচুর উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। আকার, আকৃতি বাড়ায় ভালো দাম মিলছে।