লাঙ্গল ধরার কেউ নেই
পৌর কমিটির কেউ মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাননি। জেলা পর্যায়ের নেতারাও চেষ্টা করে কোনো প্রার্থী বাছাই করতে পারেননি।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলের অবস্থা আরও নাজুক। অনেকে এখন নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
দলের কার্যক্রম এখন রংপুর নগরকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এ কারণে তৃণমূলে নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি।
জাতীয় পার্টির (জাপা) সমর্থন রংপুরে সবচেয়ে বেশি—এমন কথা প্রচলিত থাকলেও এবার জেলার কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ পৌরসভায় মেয়র পদে নেই দলটির কোনো প্রার্থী। দুর্বল সাংগঠনিক অবস্থা ও দলের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া প্রার্থী মনোনয়ন দিতে না পারার অন্যতম কারণ বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
দলটির হারাগাছ পৌর কমিটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, বর্তমানে কমিটি আছে নামমাত্র। কোনো কার্যক্রম নেই। দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর দলের অবস্থা আরও নাজুক। এখন সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল। প্রার্থী দিতে না পারায় অসন্তোষ ও হতাশা দেখা দিয়েছে কর্মীদের মধ্যে। অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন।
এদিকে অনেক নেতা-কর্মী আবার নির্বাচনে প্রার্থী না থাকার বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না। তাঁদের ভাষ্য, এটা যদি রংপুরের বাইরে কোথাও হতো, তাহলে মানা যেত। কিন্তু জাতীয় পার্টির দুর্গখ্যাত রংপুরে যদি এমন হয়, তাহলে দলের আর কী থাকল! বর্তমান কমিটির নেতারা ব্যর্থ বলেই কোনো প্রার্থী দিতে পারেননি।
জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হলেও কেউই প্রার্থী হতে রাজি হননি। এখানে জেলা কমিটিরও কিছুটা ব্যর্থতা আছে। তা হলো নিজেরা চেষ্টা করে কোনো যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে না পারা।
নিষ্ক্রিয়তার কারণ
হারাগাছে প্রার্থী না থাকা ও দলের ব্যর্থতা নিয়ে তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-কর্মী কথা বললেও নিজেদের নাম প্রকাশে রাজি নন। তাঁরা বলছেন, হারাগাছ পৌর এলাকার সংসদীয় এলাকা হলো কাউনিয়া উপজেলা। এ উপজেলার বাসিন্দা ছিলেন সাবেক সাংসদ ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি করিম উদ্দিন ভরসা। এলাকায় তাঁর ব্যাপক প্রভাব ছিল। কিন্তু তিনি কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ায় সেখানে দলের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। দলের হাল ধরতে সেখানে নতুন করে নেতৃত্বও গড়ে ওঠেনি। শুধু দলের নামমাত্র কাউনিয়া উপজেলা আহ্বায়ক কমিটি আছে। এরই প্রভাব পড়েছে পৌর কমিটিতেও।
আবার কেউ বলছেন, দলের কার্যক্রম এখন রংপুর নগরকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এ কারণে তৃণমূলের অবস্থা নাজুক। এ নিয়ে জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সদস্যসচিব ও এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার বলেন, বর্তমান জেলা পর্যায়ের নেতারা উপজেলা পর্যায়ের কর্মীদের খুব একটা খোঁজখবর নেন না। দলের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর অনেকে আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছেন।
বর্তমান জেলা পর্যায়ের নেতারা উপজেলা পর্যায়ের কর্মীদের খুব একটা খোঁজখবর নেন না। দলের চেয়ারম্যান মারা যাওয়ার পর অনেকে আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছেন।
নেতা-কর্মীরা বলছেন, রংপুরকেন্দ্রিক রাজনীতি হওয়ার কারণে শুধু জেলা পর্যায়ে সুফল মিলছে। এর উদাহরণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমানের বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া।
তৃণমূলের অবস্থা প্রসঙ্গে মোস্তাফিজার রহমান বলেন, উপজেলায় দলের নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপরও দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার চেষ্টা চলছে।
এদিকে হারাগাছ পৌর এলাকা এখন অন্যান্য দলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় মুখর। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র হাকিবুর রহমান। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এরশাদুর হক। বিএনপির প্রার্থী মোনায়েম হোসেন আর বরাবরের মতো ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হয়েছেন জাহিদ হোসেন।
২৮ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম ধাপে হারাগাছ পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১১ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১২ ফেব্রুয়ারি। এরপর টানা ১৫ দিন প্রচারণা শেষে ২৮ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ২০টি কেন্দ্রে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট প্রদান অনুষ্ঠিত হবে।