রোজার আগেই হতে পারে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের উপনির্বাচন
রোজার পর নির্বাচন করতে গেলে যদি ৯০ দিন পার হয়ে যায় তবে রোজার আগেই লক্ষ্মীপুর–২ আসনের উপনির্বাচন করে ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম।
নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর–২ থেকে নির্বাচিত শহিদ ইসলামের সাংসদ পদ বাতিল করা হয়। ওই আসন শূন্য ঘোষণা করে গত সোমবার গেজেট প্রকাশ করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়।
কোনো সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হলে শূন্য ঘোষণা করার দিন থেকে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, সংসদ সচিবালয় থেকে তাঁরা চিঠি পেয়েছেন। ওই আসনে নির্বাচনের বিষয়ে শিগগিরই বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
কবিতা খানম বলেন, সামনে যেহেতু রোজা আছে। রোজা অবশ্যই বিবেচনায় নেওয়া হবে। রোজার সময় সাধারণত কোনো নির্বাচন দেওয়া হয় না। এটাও সম্ভবত দেওয়া হবে না। কমিশন না বসা পর্যন্ত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো যাবে না। রোজার পর নির্বাচন করতে হলে যদি ৯০ দিন পার হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে রোজার আগেই নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কমিশন বসার পরেই জানা যাবে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাফর আহমেদ খানের সই করা গেজেটে বলা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সাংসদ মো. শহিদ ইসলাম। এ কারণে বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন তিনি। সে কারণে সংবিধানের ৬৭(১(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায় ঘোষণার তারিখ (গত ২৮ জানুয়ারি) থেকে তাঁর আসন শূন্য হয়েছে।
এর আগে কুয়েতের আদালতে সাংসদ মো. শহিদ ইসলামের সাজা হওয়ার বিষয়টি চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাস।
ঘুষ লেনদেনের মামলায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র সাংসদ মো. শহিদ ইসলামকে গত ২৮ জানুয়ারি সাজা দেন কুয়েতের ফৌজদারি আদালত। বিচারক রায়ে এই সাংসদকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সাংসদ বিদেশের মাটিতে ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম। গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় শহিদকে। আটকের সাড়ে সাত মাস আর বিচারপ্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় দণ্ডিত হন তিনি।
কুয়েতে মানব পাচার ও ভিসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল টাকার মালিক হন শহিদ ইসলাম। টাকার জোরে স্ত্রী সেলিনা ইসলামকেও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ বানান তিনি। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের সময় লক্ষ্মীপুরে অনেকটা প্রকাশ্য আলোচনা ছিল যে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ নোমানকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেন শহিদ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও নির্বাচনের আগেই অনেকটা জয় নিশ্চিত করে ফেলেন। এই দম্পতির সাংসদ হওয়ার প্রক্রিয়ায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি খরচ হয়েছে বলে প্রচার আছে।
কুয়েতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের পৃথক দুই মামলায় সাংসদ শহিদসহ ৬ জনের ৬৭০টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মামলা করে সিআইডি। আসামিদের মধ্যে তাঁর মেয়ে, ভাই ও শ্যালিকাও রয়েছেন। এর আগে ১১ নভেম্বর মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে শহিদ ও তাঁর স্ত্রী সেলিনার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।