আ. লীগ নেতার সাক্ষাৎকার
রাজশাহীতে পানির দাম তিন গুণ বাড়ানো অযৌক্তিক ও দৃষ্টিকটু
সেবার মান নিয়ে অসন্তুষ্টির মধ্যে পানির দাম তিন গুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা)। সম্প্রতি দাম বাড়ানোর বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নগরবাসীকে তিন গুণ টাকা দিয়ে ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে হবে। দাম বাড়ানোর খবরে নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছেন নাগরিক সংগঠনের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে প্রথম আলো কথা বলেছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের সঙ্গে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: রাজশাহী ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি জেনেছেন নিশ্চয়ই?
ডাবলু সরকার: শুনেছি পানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করে ওয়াসা বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেছে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: পানির দাম তিন গুণ বাড়ানোকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
ডাবলু সরকার: আমরা রাজশাহীকে শিক্ষানগরী বলি। আমাদের এখানে কর্মসংস্থানের জন্য সেভাবে শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠেনি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমরা করোনা মহামারি পার করছি। রাজশাহীর মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ সময় ওয়াসার পানির দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলবে। পানির দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: আপনি রাজশাহীর রাজনীতিবিদ। এখানকার বাসিন্দা হিসেবে আপনি কি ওয়াসার সেবায় সন্তুষ্ট?
ডাবলু সরকার: রাজশাহী নগরের বাসিন্দাদের ফিল্টার পানি নিশ্চিত করার জন্য আমার জানামতে প্রধানমন্ত্রী প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস করেছেন। নদীর পানি বিশুদ্ধ করে রাজশাহী নগরবাসীকে সরবরাহ করা হবে। এটা এখনো চালু হয়নি। রাজশাহী ওয়াসা যে পানি আমাদের দেয়, সেটা এখনো আয়রনমুক্ত নয়। এই পানির জন্য অনেকেরই অসুখ-বিসুখ হচ্ছে। সেই জায়গা থেকে যদি ওয়াসা মনে করে, তারা পানির দাম বৃদ্ধি করে বিশুদ্ধ পানি দেবে; তাহলে হয়তো নগরবাসীর আপত্তি থাকত না। কিন্তু এখনকার পানি দিয়েই যদি বলে, দাম তিন গুণ বাড়ালাম, এটা অযৌক্তিক ও দৃষ্টিকটু।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: পানির দাম বাড়ানোয় রাজনীতির মানুষ হিসেবে আপনাদের প্রতি, সরকারের প্রতি মানুষের ক্ষোভ বাড়বে কি?
ডাবলু সরকার: আমার জানামতে, সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বেড়ে গিয়েছিল। সেটা উপলব্ধি করে প্রধানমন্ত্রী কিন্তু ইতিমধ্যে দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওয়াসার পানির দাম যদি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে তো রাজশাহীর মানুষ মনঃক্ষুণ্ন হবেনই। আর সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে আমরা তো একধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই যাই। সেই জায়গা থেকেও আমরা ওয়াসাকে অযৌক্তিক পর্যায়ে দাম না বাড়ানোর অনুরোধ করব।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: সম্প্রতি ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। রাজশাহীর মানুষজন পেটের পীড়াসহ নানান রোগে ভোগে বলে আলোচনা আছে। আপনাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসে?
ডাবলু সরকার: রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরাও অভিযোগ পাই এ বিষয়ে। ওয়াসার পানি সরবরাহের পাইপলাইনে এখনো অনেক সমস্যা আছে। প্রচুর আয়রন আসে। জানামতে, পুরোনো পাইপগুলো তারা অনেক জায়গায় এখনো পরিবর্তন করেনি। সমস্যাপূর্ণ বলে আমরা অনেকেই ওয়াসার পানি পান করি না। সম্প্রতি কলিফর্ম পাওয়ায় এই পানি নিয়ে আরও বেশি কথা হচ্ছে। তবে অনেকেই হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিপদে পড়ে এটা পান করে। এতে করে অনেকেই অসুখ-বিসুখে ভোগে।
প্রশ্ন :
প্রথম আলো: নগরবাসী বা নাগরিক সমাজের নেতারা চান, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সেবার দাম বাড়ুক গণশুনানির মাধ্যমে। কিন্তু এটা কেউই করে না। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কি এটা করতে পারত না?
ডাবলু সরকার: যেসব প্রতিষ্ঠান বা সেবার সঙ্গে জনগণ সম্পৃক্ত থাকে, তা গণশুনানির মাধ্যমে করাই সবচেয়ে ভালো। তখন জনগণ ও ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলাপ ও যুক্তিতর্কের মাধ্যমে কোনো সিদ্ধান্ত নিলে সেখানে কোনো প্রশ্ন থাকে না। মানুষ সহজেই মেনে নেয়। কিন্তু এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে সেটা জনগণ মানে না। অসন্তুষ্টি বাড়ে। তাই ওয়াসার উচিত ছিল, গণশুনানির মাধ্যমে পানির দাম বাড়ানো।