রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: শিক্ষকদের আপত্তির মুখে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা স্থগিত
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করায় শিক্ষকদের আপত্তির মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা স্থগিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে সভাটি শুরু হয়েছিল। তবে প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের মোর্চা ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’–এর প্রতিবাদে উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান সভাটি স্থগিত করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান জানান, ‘অনিবার্য কারণে’ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাটি স্থগিত করা হয়েছে। এই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষে (সম্মান) ভর্তি পরীক্ষার বেশ কিছু বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল।
সভা সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১০টায় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা শুরু হলে সভায় কয়েকজন শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ বারীর উপস্থিতিতে সভায় থাকতে আপত্তি জানান। এর পরপরই ‘দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকবৃন্দ’-এর মুখপাত্র অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম উপাচার্যকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিনটি নির্দেশ পালন না করা নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি উপাচার্যকে বলেন, চিঠিতে সব নিয়োগ স্থগিত রাখা, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দেওয়া এবং একটি দ্বিতল ভবন দখলে রাখায় সরকারি কোষাগারে ৫ লাখ ৬১ হাজার টাকা জমাদান—এই তিন নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই নির্দেশগুলো এখন পর্যন্ত পালন করা হয়নি।
সকাল ১০টায় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা শুরু হলে সভায় কয়েকজন শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ বারীর উপস্থিতিতে সভায় থাকতে আপত্তি জানান। রেজিস্ট্রারকে অব্যাহতি দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কার্যকরের দাবি জানান।
অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘উপাচার্যকে আমরা বলেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আপনাকে কয়েকটি বিষয়ের কৈফিয়ত দিতে বলা হয়েছে এবং তিনটি বিষয় কার্যকর করতে বলা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর নিয়োগ বন্ধ করার চিঠি এসেছে, কিন্তু আপনি ১৩ ডিসেম্বর নিয়োগপত্র ইস্যু করেছেন। সরকার অব্যাহতির নির্দেশ দেওয়ার পরও আজ যদি রেজিস্ট্রারকে নিয়ে সভা করি, তাহলে দেখানো হবে যে এখানে উপস্থিত আমরা সব শিক্ষকই সেই নির্দেশ লঙ্ঘন করছি। আর এই সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে আপনিই–বা এটা করবেন কেন?’
সুলতান-উল-ইসলাম আরও বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ভর্তি পরীক্ষার সভা হোক। কিন্তু রেজিস্ট্রার থাকলে আমরা সভায় থাকব না। উপাচার্যের ভাষ্য ছিল, আমরা তর্ক–বিতর্ক করে সভা করতে দিচ্ছি না। কিন্তু আমরা বলি যে তথ্যগুলো কেবল তাঁর নজরে আনছি।’
আমরা চেয়েছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ভর্তি পরীক্ষার সভা হোক। কিন্তু রেজিস্ট্রার থাকলে আমরা সভায় থাকব না।
সভা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি এস এম এক্রাম উল্যাহ বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে দুটি ক্ষেত্রে সরাসরি নির্দেশ দেওয়া আছে। এর একটি হচ্ছে রেজিস্ট্রারকে অপসারণ করা। তাঁর বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, তথ্য গোপন করা, তদন্তে সহযোগিতা না করার বিষয়টি প্রমাণিত। আমরা উপাচার্যকে প্রশ্ন করেছিলাম, তাঁকে অপসারণ করেননি কেন? এমন ব্যক্তিকে সামনে নিয়ে আমরা সভা করতে পারি না। তর্ক–বিতর্কের একটা পর্যায়ে এসে উপাচার্য সভা স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছেন।’
অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, সভার একপর্যায়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার ফরহাদ হোসেন বলে ওঠেন, এসব নির্দেশ পালনের জন্য সিন্ডিকেট সভাসহ দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। উপাচার্য তাঁকে সমর্থন করেন। তবে সভায় বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এম খলিলুর রহমান খান, জীব ও ভূবিজ্ঞান অনুষদের ডিন এম নজরুল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি মোহা. এনামুল হক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ পালন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সভায় উপাচার্য এম আব্দুস সোবহান, সহ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এম এ বারী, ১০ জন অনুষদের ডিন, ১২ জন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক, ১৮ জন আবাসিক হলের প্রাধ্যক্ষ, ৫৯ জন বিভাগীয় সভাপতি, দুজন ইনস্টিটিউটের পরিচালক, আইসিটি সেন্টারের পরিচালক, প্রক্টর, জনসংযোগ প্রশাসক, ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাব পরিচালকসহ প্রায় ১০০ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।
জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক মো. আজিজুর রহমান বলেন, অনিবার্য কারণে আজকের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাটি স্থগিত হয়েছে। খুব দ্রুতই সভার পরবর্তী তারিখ জানানো হবে।