ময়মনসিংহ
যৌন হয়রানি রোধে সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম খুব সীমিত
শাস্তির ঘটনার তুলনায় যৌন হয়রানির ঘটনা অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিশোরী বা তরুণীরা সম্মানহানির আশঙ্কায় ঘটনা গোপন করে যান।
যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ময়মনসিংহে প্রত্যক্ষ কার্যক্রম খুব কম। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে স্বল্প পরিসরে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। এসব কর্মসূচি যৌন হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। গ্রাম ও শহরের এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁদের যৌন হয়রানি সচেতনতার বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণাই নেই। তাই এ বিভাগে যৌন হয়রানি ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না।
ময়মনসিংহ জেলায় চলতি বছরের তিন মাসে যৌন হয়রানির অপরাধে একজনকে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২০২১ সালে পুরো জেলায় যৌন হয়রানির অপরাধে কোনো দণ্ড দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। গত সোমবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কার্যালয় থেকে এ তথ্য জানা যায়।
তবে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা বলছেন, শাস্তির ঘটনার তুলনায় জেলায় যৌন হয়রানির ঘটনা অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিশোরী বা তরুণীরা সম্মানহানির আশঙ্কায় যৌন হয়রানির ঘটনা গোপন করে যান।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিশোরী, তরুণী ও প্রাপ্তবয়স্ক নারীরা অনেক সময় নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মপ্রতিষ্ঠান, বাজার, বিপণিবিতান, এমনকি ঘরেই যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কিন্তু সম্মানহানির ভয়ে কেউ কেউ এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা প্রতিকার পাওয়া যাবে, এমন কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে চান না। এ ধরনের মানসিকতাও যৌন হয়রানি বন্ধ না হওয়ার একটি কারণ। পুলিশ, আদালত, মহিলা অধিদপ্তর, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনিজওর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক ফেরদৌসী বেগম বলেন, তাঁরা বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানি বন্ধের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছেন। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলায় বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ ও নারী নির্যাতনবিরোধী সচেতনতা এবং এসব অপরাধের বিষয়ে আইনি সচেতনতামূলক উঠান বৈঠক হয়।
মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ১৩টি উপজেলায় মার্চ মাসে মোট ৫৪টি উঠান বৈঠক হয়েছে। এসব উঠান বৈঠকে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়েছে। উঠান বৈঠক ছাড়াও ময়মনসিংহ জেলার ১৩টি উপজেলায় আছে মোট ১৫৪টি কিশোর-কিশোরী ক্লাব। এসব ক্লাবে কিশোর ও কিশোরীদের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি ক্লাবের কিশোরী সদস্যদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো হয়।
সরকারি কার্যক্রমের বাইরে ময়মনসিংহ জেলায় কাজ করা কিছু বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) নারী অধিকার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ বিষয়ে কাজ করছে। এসব এনজিও বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচার চালায়।
ব্র্যাকের ময়মনসিংহ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ফোকাল পারসন (মুখপাত্র) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে ব্র্যাকের বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন বন্ধসহ নারীদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে সচেতনতামূলক সভা হয়। এসব সভায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ বিষয়ে বক্তব্য থাকে।
ময়মনসিংহের স্থানীয় তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক খন্দকার ফারুক আহমেদ বলেন, ব্র্যাক ছাড়াও তৃণমূল উন্নয়ন সংস্থা, মাটি, সারা সংস্থা, স্বাবলম্বী উন্নয়ন সংস্থাসহ আরও কয়েকটি এনজিও যৌন হয়রানি, শিশু যৌন নির্যাতন, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কাজ করছে।
ময়মনসিংহের নাগরিক সংগঠন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ময়মনসিংহে যৌন হয়রানির কোনো ঘটনা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবাদ বা বিচার দাবিতে কাজ করেন তাঁরা। যৌন হয়রানি বন্ধের বিষয়ে সচেতনতামূলক কাজ করছেন।