‘মৃত’ কিশোরীর ফিরে আসা: আগের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল
নারায়ণগঞ্জে ‘গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার’ কিশোরী ফিরে আসার ঘটনায় আগে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
জীবিত ফিরে আসা ‘গণধর্ষণের পর হত্যার শিকার’ কিশোরীর বাবার করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে মঙ্গলবার বদল করা হয়েছে। ওই মামলায় তিন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, কিশোরীকে গণধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন। এই কিশোরীকে ৫১ দিন পর জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরিদর্শক(এসআই) শামীম আল মামুনকে বদল করা হয়েছে।
ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তাকে বদল করে সেখানে পরিদর্শক পদমর্যাদার একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আরেকটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
দুপুরে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে মামলার নতুন তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইকে।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে ওই কিশোরীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সদর মডেল থানা-পুলিশ কিশোরীকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তাঁর পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনাটি চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। মামলার আগের তদন্ত কর্মকর্তাকে বদল করে সেখানে পরিদর্শক পদমর্যাদার একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপারকে (অপরাধ) আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটিকে তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
গত ৪ জুলাই নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় ১৫ বছরের কিশোরী। ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় কিশোরীর বাবা মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে আব্দুল্লাহ নামের একজন উত্ত্যক্ত করতেন। ৪ জুলাই আব্দুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীরা তাঁর মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যান। এই ঘটনায় পুলিশ অটোরিকশা চালক রকিব, আব্দুল্লাহ ও খলিলকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাঁরা নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মিলটন হোসেন ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরের পৃথক আদালতে জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, ওই কিশোরীকে অপহরণের পর গণধর্ষণ করে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছেন।
ওই কিশোরী ৫১ দিন পর টাকার জন্য মায়ের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পুলিশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এদিকে গ্রেপ্তার তিন আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে। নির্যাতন না করার কথা বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা শামীম আল মামুন তাদের কাছ থেকে কয়েক দফায় ৪৭ হাজার টাকা দেন। এ ঘটনায় জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। উদ্ধার হওয়া কিশোরী আদালতে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছে, সে ইকবাল নামের এক ছেলেকে বিয়ে করে বন্দরে একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করছিল।