মুঠোফোন নম্বর ভুল, ভাতা পাচ্ছেন না প্রায় ৩ হাজার মানুষ
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল ইউনিয়নের দিঘির পশ্চিমপাড় গ্রামের নুর জাহান এক বছর ধরে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) খোঁজ নিয়ে তিনি জেনেছেন, তাঁর ভাতার তথ্য হালনাগাদের সময় ভুল মুঠোফোন নম্বর লিপিবদ্ধ হয়েছে। তাই তিনি ভাতা পাচ্ছেন না। শুধু নুর জাহান নন, হবিগঞ্জ জেলার প্রায় তিন হাজার মানুষ মুঠোফোন নম্বরের ভুলের কারণে ভাতা পাচ্ছেন না।
হবিগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় দরিদ্র বয়স্ক ভাতা, দরিদ্র নারী মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতাসহ ১০ ধরনের ভাতা সমাজসেবা অধিদপ্তরে মাধ্যমে বিতরণ করা হয়ে থাকে। জেলায় এ ধরনের ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ৩৫০। আগে সুবিধাভোগীরা ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তিন মাস অন্তর ভাতার টাকা পেতেন। গত অর্থবছরের শেষ দিকে ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এ অর্থ প্রদানের সুবিধা চালু করে সরকার। এ জন্য প্রত্যেক ভাতাভোগীর বিকাশ হিসাব নম্বর সংগ্রহ করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। কিন্তু তথ্য লিপিবদ্ধ করার সময় ভুল মুঠোফোন নম্বর দিয়েছেন জেলার প্রায় তিন হাজার ভাতাভোগী।
স্থানীয় সমাজসেবা অধিদপ্তর জানায়, তারা নম্বরগুলোতে টাকা পাঠালেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেরত চলে যাচ্ছে। পরে খোঁজ নিয়ে তারা জানতে পারে, মুঠোফোন নম্বর হালনাগাদ করার সময় ভুল নম্বর তালিকাবদ্ধ হওয়ায় এ সমস্যা হচ্ছে।
বাহুবল উপজেলার পুটিজুরী ইউনিয়নের বাসিন্দা আইয়ুব আলী জানান, একই সমস্যার কারণে তিনি গত ১৮ মাসের ভাতা পাননি। স্থানীয় ইউপি কার্যালয়ে গেলে তারা শুধু আশ্বাস দেয়, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিকঠাক আর হয় না।
পইল ইউনিয়নের ফুলবাড়ির তাহেরা খাতুন জানান, তিনি দরিদ্র মাতৃত্বকালীন তিন বছরের ভাতার আওতাভুক্ত হন ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। প্রথম দেড় বছর ভাতা পেলেও শেষ দেড় বছর কোনো ভাতার টাকা পাননি।
বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া ইউপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদা ইউপির চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান জানান, ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ মানুষ একই সমস্যায় পড়েছেন। প্রায় সময়ই তাঁরা পরিষদে এসে ভিড় করেন। তাঁরা দ্রুত এই ভুল সংশোধনের দাবি জানান।
জানতে চাইলে হবিগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালকের দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক সিরাজুম মনির আফতারী প্রথম আলোকে জানান, হবিগঞ্জের প্রায় তিন হাজার মানুষের মুঠোফোন নম্বর হালনাগাদ করতে গিয়ে ভুল নম্বর লিপিবদ্ধ হয়েছে। এ কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে। শিগগিরই সমস্যার সমাধান হবে। ইতিমধ্যে অর্ধেক ভুল নম্বর সংশোধন করা হয়েছে। বাকিগুলো সংশোধিত হলে সবাই আগের মতো ভাতা পেয়ে যাবেন।