মিজানুরসহ বিএনপির চার নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আবেদন
রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করায় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর আবেদন করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানানো হয়।
এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, সাবেক সিটি মেয়র ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে এই মামলায় আসামি করা হচ্ছে।
আজ সকালে জেলা প্রশাসকের কাছে এ মামলার আবেদন জমা দেওয়া হয়। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক মুসাব্বিরুল ইসলাম এ আবেদন করেন।
আবেদন জমা দেওয়ার পরে দুপুর ১২টায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কুমারপাড়ার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ দলের অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এতে খায়রুজ্জামান লিটন মামলার প্রক্রিয়াটি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
মামলা করার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না পাওয়া গেলে কী করা হবে, তা জানতে চাইলে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, তিনি ইতিমধ্যে ঢাকায় কথা বলেছেন। অনুমতি না পাওয়ার কথা না। তারপরও এ বিষয়ে তাঁদের কর্মসূচি থাকবে। আজ বিকেলেই একটি প্রতিবাদসভা রয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচির কথা পরে জানানো হবে।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ২ মার্চ বিএনপি রাজশাহীতে বিভাগীয় সমাবেশ করে। মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে বিএনপির এই চার নেতা পূর্বপরিকল্পিতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশোভন মন্তব্য করেন। এ সময় নেতা-কর্মী, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতিতে মিজানুর রহমান প্রধানমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন।
মামলার আবেদনে আরও বলা হয়, মিজানুর রহমানের এই বক্তব্যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে উগ্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। কিছু নেতা-কর্মী সমাবেশের এই বক্তব্য ফেসবুকে লাইভ করেন। সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রুহুল কুদুস তালুকদার দুলুসহ অন্যরাও একইভাবে বক্তব্য দিয়ে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করেন এবং বেআইনিভাবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকার উৎখাতের হুমকি দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাসহ নির্বাচিত সরকার উৎখাতের প্রকাশ্য ঘোষণা ও হুমকি দিয়ে তাঁরা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করেছেন, যা বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি বিপজ্জনক ও হুমকিস্বরূপ।
সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশোভন বক্তব্য দেওয়ায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করে মহানগর আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। এ সময় মিজানুর রহমানকে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ৭২ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। নইলে মামলা করারও ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। ৭২ ঘণ্টা পর মিজানুর রহমান গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠিয়ে বলেন, ‘আমার বক্তব্যের জন্য যাঁরা ব্যথিত হয়েছেন, মর্মাহত হয়েছেন, আমি তাঁদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি।’ কিন্তু ক্ষমা না চাওয়ায় আওয়ামী লীগ মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়।