২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

মহালছড়িতে পাহাড়িদের ২৩টি ঘর পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ

খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে পাহাড়িদের ২৩টি ঘরে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার সকাল সাতটা থেকে নয়টার মধ্যে উপজেলার মাইসছড়ি ইউনিয়নের জয়সেনপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে বলে দাবি করেন পাড়ার কার্বারি (পাড়াপ্রধান) জ্যোতি লাল চাকমা। তাঁর অভিযোগ, পাশের পাড়ার বাঙালি বাসিন্দারা এ ঘটনায় জড়িত। তবে ওই পাড়ার বাঙালি বাসিন্দারা বলছেন, জয়সেনপাড়ায় তাঁরা হামলা করেননি।

মহালছড়ি সদর উপজেলা থেকে জয়সেনপাড়ার দূরত্ব আট কিলোমিটার। তার পাশেই বাঙালি অধ্যুষিত মুসলিমপাড়ার অবস্থান। স্থানীয় সূত্র বলছে, দুই পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ২০ একরের পাহাড়ি জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময়ে এ জায়গা নিয়ে দুই পাড়ার বাসিন্দাদের মধ্যে সংঘাত হয়।

জয়সেনপাড়ার কার্বারি জ্যোতি লাল চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, গত মঙ্গলবার ছিল মহালছড়ি বাজারের সাপ্তাহিক হাট। পাড়ার অধিকাংশ লোকজন সেদিন প্রতি সপ্তাহের মতো বাজারে যান। ওই দিন সকাল সাতটার দিকে পাশের বাঙালিপাড়ার শতাধিক বাসিন্দা এখানে হামলা চালান। তাঁরা প্রথমে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় জয়সেনপাড়ার ২৬টি ঘরের মধ্যে ২৩টি ঘর পুড়ে যায়।

মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আজিজ প্রথম আলোকে বলেন, পাহাড়িদের একটি বিশেষ রাজনৈতিক চক্র টিলার ওপর বিচ্ছিন্ন দু-একটা ঘর তৈরি করে সেখানে আগুন দিয়েছে। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে।

স্থানীয় পাহাড়িরা জানান, যে ২০ একর জায়গা নিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে, সেখানে একসময় পাহাড়িরা বসবাস করতেন। ১৯৮৬ সালের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর পাহাড়িরা এখানকার বসতি ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যান। এরপর ১৯৮৮ সালে বহিরাগতরা এখানে বসতি করেন। ১৯৯৭-৯৮ সালে বহিরাগতরা আবার এ জায়গা ছেড়ে গুচ্ছগ্রামে চলে যান। এর পর থেকেই এ জায়গা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে।

জয়সেনপাড়া লেমুছড়ি মৌজার মধ্যে পড়েছে। মৌজার হেডম্যান দিনেন্দ্র চাকমা বলেন, জয়সেনপাড়া এলাকায় ২০ একর জমির মালিক তিন পরিবার। তাঁরা হলেন রবিচন্দ্র চাকমা, জ্যোতিষ চন্দ্র চাকমা ও নোয়ারাম চাকমা। তাঁরা এ জমির বন্দোবস্ত পেয়েছেন পাকিস্তান আমলে।

ওই ২০ একর জায়গার মালিকানা নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোবাইদা আক্তারও। তিনি আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষের কাছে এ জায়গার কাগজপত্র চেয়েছি। এসব দেখে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করা হবে।’

মঙ্গলবার সেখানে পাহাড়িদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগের যে অভিযোগ উঠেছে, সেটির সত্যতা পায়নি বলে দাবি করছে উপজেলা প্রশাসন ও থানা–পুলিশ। মহালছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করেছি। কেউ পাহাড়িদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেননি। তাঁরা নিজেদের পরিত্যক্ত ঘর নিজেরাই পুড়িয়ে দিয়েছেন।’ আর ইউএনও জোবাইদা আক্তার বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছি। তবে ওখানে কোনো পাহাড়ি অভিযোগ করেননি।’

এদিকে জয়সেনপাড়ায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা ও বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।

আজ এক বিবৃতিতে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান বলেন, এ ঘটনায় সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা জড়িত। তাঁরা এসব সন্ত্রাসীর গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি করেন। একই সঙ্গে সংঘবদ্ধ এ হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনা সামাল দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের এ ব্যর্থতার কারণ অদক্ষতা যেমন, তেমনি বলা যায়, একটা স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের সঙ্গে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতার সম্পর্ক না থাকা।

এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন আজ এক বিবৃতিতে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন। সিপিবির দুই নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক এ ধরনের হামলা, অপহরণের ঘটনা পাহাড়ে ঘটে চললেও পাহাড়িদের নিরাপত্তা সরকার নিশ্চিত করতে পারছে না।