ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটের পন্টুন ডুবে আছে ২৩ দিন
তীব্র ঢেউ ও তীর সংরক্ষণ ব্লকের আঘাতে ভোলা সদর উপজেলার ব্যস্ততম ইলিশা লঞ্চঘাটের পন্টুনটি ফুটো হয়ে ডুবে যায়।
অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতীরের প্রায় ১০টি লঞ্চঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে লঞ্চচালক ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। তীব্র ঢেউ ও তীর সংরক্ষণ ব্লকের (পাকা ফোল্ডার) আঘাতে ভোলা সদর উপজেলার ব্যস্ততম ইলিশা লঞ্চঘাটের পন্টুনটি ফুটো হয়ে ডুবে যায়। ২৩ দিন চলে গেলেও সেটি তোলা হয়নি। বসেনি নতুন পন্টুন। বাকি ঘাটগুলোরও সংস্কারকাজ শুরু হয়নি।
ভোলার ইলিশা ফেরিঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ইমরান খান বলেন, ভোলার ইলিশা ঘাটে একটি লঞ্চঘাট ও একটি ফেরিঘাট রয়েছে। ইলিশা লঞ্চঘাট থেকে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌপথের সি–ট্রাক ও সাত-আটটি লঞ্চ, ভোলা-ঢাকাগামী দুটি ওয়াটার বাস ও পাঁচ-ছয়টি লঞ্চ ছাড়ত। এ ছাড়া বরিশাল-ভোলা নৌপথের দুটি লঞ্চ ছেড়ে যায়। গত ১৮ আগস্ট জোয়ারের তোড়ে লঞ্চঘাটের পন্টুন ফুটো হয়ে ডুবে যায়। এরপর ২৩-২৪ দিন ধরে লঞ্চগুলো ফেরিঘাটের পন্টুনের সঙ্গে নোঙর করছে। এখন ঘাটে প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে। ব্যবস্থাপক আরও বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কয়েক হাজার যাত্রী একটি ঘাট থেকে ওঠানামা করায় মালবাহী ট্রাক ও বাস ফেরিতে উঠাতে সমস্যা হচ্ছে। বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও লঞ্চগুলো নোঙর করছে।
ঘাটের যাত্রীরা জানায়, মাত্র একটি ঘাট দিয়ে এতগুলো লঞ্চ চলাচলের কারণে যাত্রীদের মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সরকার বলছে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে। কিন্তু ভোলার লঞ্চঘাটের পরিস্থিতি এমন যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কষ্টকর।
ভোলা ফেরিঘাটে পরিবহনকর্মী মো. হোসেন বলেন, ইলিশা ঘাটে কোনো পার্কিং প্লেস নেই। রাস্তার ওপর কাদা। আশপাশে ঝুপড়ির মতো দোকান। এর মধ্যে লঞ্চঘাটের পন্টুন ফুটো হয়ে ডুবে আছে। যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। বিকল্প কোনো পন্টুন না থাকায় ফেরিঘাটের পন্টুন দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা লঞ্চ ও সি–ট্রাকে যাতায়াত করছেন।
যাত্রী, লঞ্চের মাস্টার ও ফেরিঘাট ব্যবস্থাপকের দাবি, লঞ্চঘাটের পন্টুন সংস্কারসহ ব্যস্ততম ঘাটটি দ্রুত আধুনিক করা হোক।
পূর্ব ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মিঞা সিরাজ বলেন, ভোলার পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে মেঘনার তীরে দুটি লঞ্চঘাট। একটি বিশ্বরোডের মাথায়, আরেকটি ফেরিঘাটসংলগ্ন। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে তাঁদের, দুটি ঘাট একত্র করে একটি আধুনিক মানের ঘাট নির্মাণ করা হোক। কারণ, এ এলাকার ঘাট থেকে ঢাকা-লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল নৌপথের একাধিক লঞ্চ ও ওয়াটার বাস ছেড়ে যাচ্ছে। ফলে এটি ব্যস্ততম ঘাটের একটিতে পরিণত হয়েছে।
ভোলা সদর উপজেলার লঞ্চঘাটটি ছাড়াও ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট, দৌলতখান উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লঞ্চঘাট, বোরহানউদ্দিন উপজেলার হাকিমুদ্দিন লঞ্চঘাট ও মির্জাকালু লঞ্চঘাট, তজুমদ্দিন উপজেলার চৌমুহনী লঞ্চঘাট ও স্লুইসগেট সি–ট্রাকঘাট, মনপুরা উপজেলার রামনেওয়াজ ও হাজিরহাট লঞ্চঘাট, লালমোহন উপজেলার মঙ্গল শিকদার, নাজিরপুর ও গজারিয়া খালগোড়া লঞ্চঘাট, চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া, বকশি লঞ্চঘাটের পন্টুন এবং গ্যাংওয়ে ও সংযোগ সড়ক জোয়ারের তোড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, আম্পানের পর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত কয়েক দফায় জোয়ারের তাণ্ডবে ভোলার ২৭টি লঞ্চঘাটের কমবেশি ক্ষতি হয়েছে।
ঘাটের ইজারাদার ও যাত্রীরা জানান, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর তীরে যে লঞ্চঘাটগুলো রয়েছে, সেগুলো খুবই নিম্নমানের। বিআইডব্লিউটিএ নামকাওয়াস্তে একটি পন্টুন এনে বসিয়ে দেয়, যেগুলো সাধারণ নদীঘাটের জন্য ঠিক আছে। কিন্তু ভোলার মেঘনা, তেঁতুলিয়া নদী উত্তাল। বর্ষার উচ্চ জোয়ার এলেই এসব পন্টুন ভেসে যায়। সংযোগ রশি ছিঁড়ে যায়। পন্টুন ও গ্যাংওয়ে শক্ত করে বাঁধা হয় না। আবার গ্যাংওয়ের সঙ্গে অ্যাপ্রোচ সড়কের কোনো সামঞ্জস্য নেই। অথচ এসব ঘাটে যাত্রীর কাছ থেকে ১০ টাকা করে টিকিট কাটা হচ্ছে। একটি লাগেজ ও মালামাল ওঠানামা করতে মোটা টাকা গুনতে হয় যাত্রীদের। প্রতিটি ঘাট থেকে বছরে কয়েক কোটি টাকার টোল ওঠানো হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীসেবা শূন্য।
ইলিশা লঞ্চঘাটের ইজারাদার হোসেন শহীদ সরোয়ারদী মাস্টার বলেন, তাঁরা প্রতি মাসে প্রায় অর্ধকোটি টাকা দিয়ে এই ঘাট ইজারা নিয়েছেন। তাঁরাও টোল ওঠাচ্ছেন। কিন্তু যাত্রীসেবার কিছু নেই। ভিআইপি যাত্রী এলে তাঁদের লজ্জায় পড়তে হয়। বারবার বিআইডব্লিউটিএকে চিঠি প্রদানসহ মৌখিকভাবে জানালেও তারা ইলিশা লঞ্চঘাট সংস্কার করছে না। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে।
ভোলা নদী বন্দরের উপপরিচালক মো. কামরুজ্জামান জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে ভোলার ইলিশাসহ জেলার ১০-১২টি লঞ্চঘাটের পন্টুন, গ্যাংওয়েসহ যাত্রী ওঠানামার অ্যাপ্রোচ সড়কের ক্ষতি হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর বরিশাল বিভাগীয় নির্বাহী প্রকৌশলী জরিপ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। জোয়ারের কারণে কাজ শুরু করতে পারছেন না।
উপপরিচালক আরও বলেন, ইলিশা লঞ্চঘাটসহ আরও পাঁচটি লঞ্চঘাট বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আধুনিকীকরণ করা হবে।
বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক জানান, দু-চার দিনের মধ্যে ভোলার ইলিশা লঞ্চঘাটের সংস্কারকাজ শুরু হবে।