রাজশাহীর বাগমারায় বয়স জালিয়াতি করে বয়স্ক ভাতার তালিকাভুক্ত হওয়া ৭৫০ সুবিধাভোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে। বয়স যাছাইয়ের জন্য সফটওয়্যার চালুর পর ধরা পড়েছে তাঁদের এই প্রতারণা। ফলে তাঁদের বাদ দিয়ে প্রকৃত বয়স্কদের ভাতার আওতায় নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর। তবে নির্দেশনা না থাকায় আইনগত বা অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
উপজেলা সমাজসেবা দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নীতিমালা অনুযায়ী ভাতাভোগী হতে হলে পুরুষদের সর্বনিম্ন বয়স হতে হবে ৬৫ এবং নারীদের ৬২ বছর। বয়স প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে নেওয়া হয়। স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে ভাতাভোগীদের নির্বাচিত করা হয়। বাগমারায় স্থানীয় কমিটির সদস্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মাধ্যমে ৭৫০ জন তাঁদের বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। তাঁরা জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মতারিখে ঘষামাজা অথবা ভুয়া জন্মসনদ তৈরি করে বয়স বাড়িয়ে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। তবে জন্মসনদের বিধান সম্প্রীতি বাতিল করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা গ্রহণ করে আসছেন। তাঁদের এই কাজে সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা জড়িত।
এদিকে সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যাচাই–বাছাই করা শুরু হলে জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। দুই মাস ধরে চলা এই যাচাই-বাছাই কার্যক্রমে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভার মোট ১২ হাজার ২৮৮ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ৭৫০ জনের বয়স জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়েছে। এই ৭৫০ ব্যক্তি নিজেদের বয়স ৮-১০ বছর বাড়িয়ে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করে আসছেন। এসব ভাতাভোগীদের নাম বাতিল করে নতুনদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার বয়স্ক ও ভাতাবঞ্চিত ব্যক্তিদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ইউনিয়ন কমিটি থেকে উপজেলা কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
গোবিন্দপাড়া ইউনিয়নে ৪৭ জন বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধের মাধ্যমে তাঁরা জালিয়াতি করে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন।
তালিকাভুক্ত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবা দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে এই ভাতা চালু হয়। প্রথম দিকে বয়স প্রমাণের জন্য কোনো প্রমাণপত্র প্রয়োজন না হলেও পরে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যে অনিয়ম বেশি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিন ব্যক্তি বলেন, তাঁরা ভাতা পাওয়ার উপযোগী হলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁদের বয়স কম দেখানো হয়েছে। ওই সময়ে যাঁরা ভোটার তালিকা করেছেন, তাঁরাই বয়স বসিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে তাঁরা জন্মসনদে সঠিক বয়স দিয়ে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তবে জাতীয়পত্রে বয়স কম থাকার কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়ছেন বলে শুনেছেন তাঁরা।
বয়স জালিয়াতি করে ভাতার তালিকাভুক্ত হওয়া এক নারীসহ চার ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তাঁরা কিছুই জানেন না।
উপজেলা গোবিন্দপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিজন কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ইউনিয়নে ৪৭ জন বয়স জালিয়াতি করে ভাতাভুক্ত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধের মাধ্যমে তাঁরা জালিয়াতি করে ভাতার তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। তাঁদের বাদ দিয়ে নতুন করে ৪৭ জনের নাম, বয়সের প্রমাণপত্রসহ উপজেলা কমিতি পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল মমিন প্রথম আলোকে বলেন, সফটওয়্যারের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাইয়ে ৭৫০ জনের বয়স কমের বিষয়টি ধরা পড়ে। তাঁদের বাদ দিয়ে নতুনদের তালিকাভুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা বা টাকা ফেরতের নির্দেশনা নেই। তবে এ পর্যন্ত তাঁরা (৭৫০ জন) কী পরিমাণ ভাতার টাকা তুলেছেন, তার হিসাব নেই।