ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙন
বিলীন অর্ধশত ঘরবাড়ি, জমি
১০ দিন ধরে নদের পাড় ভেঙে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুন্দেরপাড়া ও খারজানি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন।
বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই কয়েক দফার বৃষ্টিতে ভাঙন শুরু হয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে। ১০ দিনের ব্যবধানে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের কুন্দেরপাড়া ও খারজানি গ্রামের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, ৫০ একর আবাদি জমি ও অসংখ্য গাছপালা বিলীন হয়েছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে দেড় শতাধিক মানুষ। তারা সরকারি জায়গা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। হুমকির মুখে আছে অসংখ্য ঘরবাড়ি।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, গত দুই দিনে কামারজানি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়েছে। পানি বৃদ্ধির পরিমাণ অব্যাহত।
গতকাল রোববার সকালে সরেজমিনে দুটি গ্রামে নদীভাঙনের চিত্র দেখা যায়। এ সময় কেউ ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছিলেন, কেউ নদ থেকে দূরে নতুন করে একচালা ঘর তুলছেন। আসবাব সরিয়ে নেন অনেকে। গৃহহীনেরা সরকারি জায়গায় আশ্রয় নিলেও বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশু নিয়ে। নলকূপ বিলীন হওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির সংকট।
তিন দিন আগে ভাঙনে ঘর বিলীন হয় কুন্দেরপাড়া গ্রামের সাহারা বেগমের (৫৫)। তিনি বলছিলেন, ‘এ্যাকদিকে করোনা। হাটবাজারোত যাবার পাইনে। তার ওপর নদী ভাঙন। নদী হামারগরে সবকিচু কাড়ি নিচে। এ্যাকনা ঘর আচিলো, তাও তিন দিন আগোত নদীত চলি গেচে।’
কুন্দেরপাড়া ও খারজানি গ্রাম দুটি ব্রহ্মপুত্র নদের পারে অবস্থিত। এই দুই গ্রামে নদের পাড়ে ভাঙন রোধে কোনো কর্মসূচি নেই। খারজানি গ্রামের কৃষক আবদুল লতিফ (৫০) আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘এ্যাক বচর আগোত হামরা গেরেসতো আচিনো। হামারগরে জমাজমি, বাড়িভিটা সগি আচিলো। নদী ভাঙি হামরাগরে একন কিচুই নাই। মানষের
জাগাত এ্যাকনা ঘর তুলি আচিনো, তাক সাত দিন আগে ভাঙি গেচে।’
দুই গ্রামের আরও কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ দিন ধরে প্রতিদিনই দুই থেকে তিন ফুট পরিমাণ নদের পাড় ভাঙছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, গ্রাম দুটি নদের পূর্ব তীরে। পশ্চিম তীরে একটি কাজ চলমান। এর ১০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এটি শেষ হলে অপর পাশের তীরের ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম
জেলার রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের বুড়িরহাটের স্পার বাঁধের ১৫০ মিটার অংশ গতকাল রোববার ভেঙে গেছে। উজানের পাহাড়ি ঢলে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় এ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
একইভাবে পার্শ্ববর্তী বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের গাবুর হেললা ক্রসবাঁধটির দক্ষিণ অংশ ধসে তিস্তায় বিলীন হয়েছে। বাঁধ দুটি ভেঙে যাওয়ায় ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের পানিবন্দী হয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত বছর তিস্তার ভয়াবহ ভাঙনে বুড়িরহাট স্পার বাঁধটির পুরো অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।