বিধি লঙ্ঘন করে স্কুলভবন বিক্রি করে দিলেন শিক্ষক
বিধি লঙ্ঘন করে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শানপুকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত ভবন বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গত সোমবার ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন ও প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে গোপনে সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ অব্যবহৃত তিন কক্ষবিশিষ্ট ভবনটি মাত্র ১৪ হাজার টাকায় শানপুকুড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী বাচ্চুর কাছে বিক্রি করে দেন। বাচ্চু তাঁর লোকজন দিয়ে গত শনিবার রাতে ভবনটি ভেঙে ইট, সিমেন্টের খুঁটি ও চালের টিন বাড়ি নিয়ে যান।
বিদ্যালয়ের ভবন বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ বলেন, উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা খাতুনের নির্দেশে ১৪ হাজার টাকায় ভবনটি বিক্রি করা হয়েছে। পরে ওই ভবন বিক্রির ১৩ হাজার ৯০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি জানেন। তবে যথাযথ প্রক্রিয়ায় না হওয়ায় পরবর্তীতে টাকা ফেরত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিনা খাতুন বলেন, পুরোনো ভবন বিক্রির সঙ্গে তিনি কোনোভাবেই জড়িত নন। বিকাশের মাধ্যমে টাকা নেওয়া ও পরে তা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সহকারী শিক্ষক হারুন আমার কাছ থেকে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য টাকা ধার নিয়েছিলেন। ধার হিসেবে নেওয়া সেই ১৩ হাজার ৯০০ টাকা তিনি আমাকে বিকাশ করে দিয়েছিলেন।’
ওই ভবনের ক্রেতা ব্যবসায়ী বাচ্চু বলেন, সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ ও প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলামের উপস্থিতিতে আলোচনা করে ১৪ হাজার টাকায় ভবনটি কেনা হয়েছে।
তবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, গত রোববার সকালে স্কুলে গিয়ে তিনি ভবন ভাঙা দেখতে পান। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সহকারী শিক্ষক হারুন-অর-রশিদ বিদ্যালয়ের পুরোনো ভবন বিক্রি করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, বিদ্যালয়ের অব্যবহৃত ভবন বিক্রির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, কিছু বিধি অনুসরণ করে বিদ্যালয়ের ভবন বিক্রি বা ভাঙতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম বিধি হলো ইউএনওর সভাপতিত্বে একটি কমিটি হবে। ওই কমিটিতে উপজেলা প্রকৌশলী থাকবেন। তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। এরপর কমিটির আবেদনের মাধ্যমে কমিটি দরপত্র আহ্বান করে ভবন বিক্রি করবে। শানপুকুড়িয়ার ক্ষেত্রে এসব বিধি মানা হয়নি।
লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিষয়টি জানতে পেরেছি। এ ব্যাপারে শিক্ষা কর্মকর্তাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’