বানেশ্বর বাজারে ৪৮ কেজিতে আমের মণ আর হবে না

রাজশাহীর পুঠিয়ায় বানেশ্বর বাজারের ব্যবসায়ীদের ‘ঢলন’ প্রথা বাতিল বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকালে বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির কার্যালয়ে
সংগৃহীত

দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি বড় ব্যবসাকেন্দ্র রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজার। এখান থেকে সারা দেশে কৃষিপণ্য যায়। এই বাজারের ছিল নিজস্ব ওজনরীতি। সারা দেশে ৪০ কেজিতে মণ ধরা হলেও বানেশ্বর বাজারে আমের মণ ধরা হতো ৪৮ কেজিতে। পেঁয়াজের মণ ৪২ ও রসুনের ৪১ কেজিতে।

এই বাজারের ব্যবসায়ীরা এক মণের দামে ৪০ কেজির ওপরে যেটুকু বেশি নেন, তার নাম দিয়েছেন ‘ঢলন’। বাজারের রীতি অনুযায়ী, কৃষক ‘ঢলন’ দিতে বাধ্য থাকেন। শুক্রবার স্থানীয় প্রশাসন এক বৈঠকে ব্যবসায়ীদের ‘ঢলনপ্রথা’ বাতিল করেছেন। ফলে এই বাজারে আর আমের মণ ৪৮ কেজিতে হবে না। ব্যবসায়ীরা এত দিন কৃষকদের বুঝিয়েছিলেন কৃষিপণ্যের ওজন পরে কমে যায়। সে কারণে এই ‘ঢলন’ দিতেই হবে। এভাবে বানেশ্বর বাজারে দীর্ঘদিন ধরে এই ঢলনপ্রথা চালু আছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন চাষিরা।

শুক্রবার সকালে বানেশ্বর বাজার বণিক সমিতির কার্যালয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী, চাষি, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের এক মতবিনিময় সভায় নতুন এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের সাংসদ মুনসুর রহমান, বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জি এম হিরা বাচ্চু, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুমানা আফরোজ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুন নাহার ভূঁইয়া। সভাপতিত্ব করেন বানেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী সুলতান। সভায় স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন।

সভায় চাষিরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁদের এক মণে অতিরিক্ত কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের দিতে হতো। দিতে না চাইলে তাঁদের পণ্য বিক্রি হতো না। তাঁরা আড়তদারদের কাছে জিম্মি ছিলেন। এতে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছেন। তাঁরা এই ঢলনপ্রথা দীর্ঘদিন ধরে বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

পুঠিয়া উপজেলার শাহাবাজপুরের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, সারা দেশে ৪০ কেজিতে মণ হলেও তিনি ৪২ কেজির মণ ধরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন। মাড়িয়া গ্রামের কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, তিনি রসুন বিক্রি করেছেন ৪১ কেজিতে মণ হিসেবে।

ব্যবসায়ী বাবর আলী বলেন, বানেশ্বর বাজারে তিনি ৩৬ বছর ধরে ব্যবসা করে আসছেন। তাঁর আমের আড়ত আছে। প্রতিবছর আমের মণ নির্ধারণ করা হয়। দুই বছর আগে ৪৫ কেজিতে মণ ছিল। এবার ব্যবসায়ীরা বসে ঠিক করেছিলেন ৪৮ কেজিতে মণ। তিনি বলেন, কাঁচামাল ঢাকায় নেওয়ার পথে পচে যায়। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়। এ জন্যই ঢলন নেওয়া হয়।

পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, ব্যবসায়ীরা বানেশ্বর বাজার থেকে কৃষকের কাছ থেকে ঢলন নেন, কিন্তু রাজশাহীর বাইরে গিয়ে তাঁদের আর ঢলন দিয়ে বিক্রি করতে হয় না। এখানে ৪৮ কেজিতে মণ ধরে তাঁরা আম কিনেছেন। কিন্তু ঢাকায় তাঁরা ৪০ কেজিতে মণ হিসেবেই বিক্রি করেছেন। যেহেতু তাঁরা ঢাকায় গিয়ে ঢলন দেন না। এই যুক্তিতে তাঁদের বাধ্য করা হয়েছে যে তাঁরা বানেশ্বরেও ৪০ কেজিতে মণ ধরে সব কৃষিপণ্য কিনবেন। তিনি বলেন, অল্প দিন আগেই তিনি পুঠিয়ায় যোগ দিয়েছেন। সেখানে গিয়েই চাষিদের কাছ থেকে এই অভিযোগ শোনেন। চাষিরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসক, কৃষি কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলেছেন। এরপরই এ সভার আয়োজন করা হয়।

ইউএনও নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ আরও বলেন, সারা দেশে ৪০ কেজিতে এক মণ। ব্যতিক্রম ছিল বানেশ্বর বাজার। অথচ এই বাজারেই রাজশাহীর মধ্যে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে। এখানে চাষিরা বছরের পর বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আসছিলেন। এই ওজন নিশ্চিত করতে শনিবার থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। পুঠিয়ার সব বাজারেই যাতে এই ওজন ঠিক থাকে, সে বিষয়ে নজরদারি করা হবে। রাজশাহী জেলার অন্যান্য বাজারে যেহেতু ৪০ কেজিতে মণ, সে জন্য তিনি এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছেন।