বরফ-ডিজেলসংকটে বিপাকে ইলিশ খাত

বিদ্যুতের পর্যাপ্ত ভোল্টেজ না থাকায় পাথরঘাটা উপজেলায় বরফকলগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে দেখা দিয়েছে বরফসংকট। গত শুক্রবার দুপুরে বরগুনার পাথরঘাটায় বিএফডিসিতে
ছবি: প্রথম আলো

ইলিশের প্রাচুর্য হঠাৎ বেড়ে গেছে গভীর বঙ্গোপসাগরে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের মোকামগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ ইলিশ আসছে। এতে আনন্দের বদলে উল্টো হতাশ জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী সবাই। ইলিশের দাম যেমন কমে গেছে, তেমনি বরফ–সংকটে মাছ সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। আবার ইলিশের ভরা মৌসুম আসতেই ডিজেলের সংকট প্রকট। ফলে ট্রলার নিয়ে সাগরে যেতে পারছেন না জেলেরা।

জেলে ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দক্ষিণাঞ্চলে কোনো হিমাগার (কোল্ডস্টোরেজ) নেই। বরফ দিয়ে মাছ সাময়িক সংরক্ষণ করতে হয়। আবার জেলেরা সাগরে যান ট্রলারে বরফ নিয়ে। কারণ, ৮ থেকে ১০ দিন সাগরে থাকতে হয়। বরফ না দিলে এত দিন মাছ ভালো থাকে না। কিন্তু এখন বরফ মিলছে না প্রয়োজনমতো। যা মিলছে, তা–ও কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। বরিশাল, বরগুনা ও পটুয়াখালীর মৎস্যবন্দরগুলোতে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি ক্যান (দুই মণ) বরফ ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। তা এখন ৩০০-৩৫০ টাকায় উঠেছে।

বরিশাল ইলিশ মোকামের আড়তদার জহির সিকদার বলেন, এখন বরিশালে প্রতিদিন কমপক্ষে সাত হাজার ক্যান বরফের প্রয়োজন। কিন্তু তার অর্ধেকও এখানে উৎপাদন হয় না। তাই খুলনা থেকে বেশি দামে বরফ আনাতে হচ্ছে। এতে দাম বেড়ে যাচ্ছে।

বরিশাল বরফকল মালিক সমিতির সদস্য ফারুক সিকদার বলেন, বরিশাল পোর্ট রোড এলাকায় মাত্র আটটি বরফকল উৎপাদনে আছে। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে তাঁরাও সক্ষমতা অনুযায়ী বরফ উৎপাদন করতে পারছেন না।

দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম বড় মৎস্যবন্দর পটুয়াখালীর মহিপুরেও এখন বরফ–সংকট প্রকট। বিদ্যুতের অভাবে এখানকার ২৫টি বরফকলের একটিও শতভাগ উৎপাদনে নেই। এখানেও রয়েছে ডিজেলের চরম সংকট। এ অঞ্চলের সর্ববৃহৎ মৎস্যবন্দর বরগুনার পাথরঘাটায় একই অবস্থা। বরফ–সংকটে এখানকার আড়তদারেরাও দিশেহারা। আর ডিজেল না পেয়ে ট্রলারগুলো যথাসময়ে সাগরে যেতে পারছে না। মাত্র কয়েক দিন ধরে ইলিশ ধরা পড়ছে। এরই মধ্যে বরফ ও ডিজেল–সংকটে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ী সবাই বিপাকে পড়েছেন।

বরফ তৈরি করতে ২৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ লাগে। কিন্তু পাথরঘাটায় ১৫ দিন ধরে রাতে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি চলছে। যে সময়টুকু বিদ্যুৎ থাকে, তখনো ঠিকমতো ভোল্টেজ পাওয়া যায় না। ফলে এখানকার ১৭টি বরফকলের একটিও সক্ষমতা অনুযায়ী বরফ উৎপাদন করতে পারছে না।

পাথরঘাটার জ্বালানি ব্যবসায়ী এনামুল হক বলেন, পাথরঘাটায় কোনো ফিলিং স্টেশন নেই। ঝালকাঠি থেকে তিনিসহ দুজন ব্যবসায়ী ডিজেল এনে ট্রলারে সরবরাহ করেন। বর্তমানে পাথরঘাটায় প্রতিদিন ৫০ হাজার লিটার ডিজেলের চাহিদা রয়েছে। এত ডিজেলের জোগান দিতে তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন।

পাথরঘাটা মৎস্য আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মারুফ খন্দকার বলেন, ইলিশ আহরণ ও সংরক্ষণের জন্য বরফ ও ডিজেল দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতেই ইলিশের দাম হঠাৎ পড়ে গেছে। এ অবস্থায় এখনই বরফ ও ডিজেল–সংকটের সুরাহা না হলে এবার ইলিশ খাতের কেউই লাভের মুখ দেখবেন না।