বগুড়ায় সাংসদের বিরুদ্ধে আ.লীগের পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগ
বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সাংসদ সাহাদারা মান্নান গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ও প্রভাব খাটিয়ে ছোট ভাইকে সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে বসিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন দলের একাংশের নেতারা। একই সঙ্গে তাঁরা সাংসদের বিরুদ্ধে পকেট কমিটি গঠন করার অভিযোগ করেছেন। আজ রোববার বগুড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন তাঁরা এসব অভিযোগ করেন। তবে সাংসদ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সোনাতলা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জাকির হোসেন বলেন, ১৩ মার্চ সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। এতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কাউন্সিল অধিবেশনে অনুপস্থিত ছিলেন না অসীম কুমার উকিল। এ সুযোগে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ও প্রভাব খাটিয়ে সাংসদ সাহাদারা মান্নান ‘পকেট কমিটি’ করতে তাঁর ছোট ভাই মিনহাদুজ্জামান লীটনকে সভাপতি ও নিকটাত্মীয় আবদুল মালেককে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন। গঠনতন্ত্রবিরোধী এই কমিটি বাতিল করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, নিজের পরিবার ও স্বজনদের নিয়ে পকেট কমিটি করতে সাংসদ সম্মেলনের আগেই ‘নীলনকশা’ করেন। তিনটি ইউনিয়নের কাউন্সিলরদের তালিকা গোপন রেখে সম্মেলনের আগমুহূর্তে প্রকাশ করা হয়। উপজেলার দিগদাইড় ইউনিয়নের অনুমোদিত কমিটি থেকে ১০ জন কাউন্সিলরের নাম রাতারাতি অবৈধভাবে বাদ দিয়ে তাঁদের স্থলে ভুঁইফোড়দের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, সাংসদ সাহাদারা সারিয়াকান্দি উপজেলা কমিটির সভাপতি পদে রয়েছেন। তিনি সোনাতলা উপজেলা কমিটির কেউ নন। অথচ দিগদাইড় ইউনিয়নের কাউন্সিলর তালিকায় সাংসদ অনুস্বাক্ষর করেছেন। এটা গঠনতন্ত্রের পরিপন্থী। দিগদাইড় ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক লিখিত অভিযোগ করলেও কাউন্সিলে তা আমলে নেওয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেন অভিযোগ করেন, বালুয়া ইউনিয়নের কাউন্সিলর তালিকাভুক্ত নাহারুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি পোড়ানো ও নাশকতা মামলার আসামি।
কমিটি গঠনে নানা ধরনের অনিয়ম হওয়ার বিষয়ে জাকির হোসেন বলেন, উপজেলার পাকুল্যা ইউনিয়ন কমিটির কাউন্সিলর তালিকাতেও জামায়াত,বিএনপির লোকজনসহ একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী, মা–বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি, ভাই-ভাবি এমনকি বাড়ির কাজের লোকও জায়গা পেয়েছেন। ত্যাগীদের বদলে প্রতিটি ইউনিয়নে সাংসদের আজ্ঞাবহ, সুযোগসন্ধানীদের নিয়ে কাউন্সিলর তালিকা করা হয়েছে। সোনাতলা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির চেয়ারে তাঁর ছোট ভাইকে বসানো হয়েছে। ইউনিয়ন থেকে উপজেলা সর্বত্রই তাঁর পরিবার ও পকেটের লোকজনে ভরা।
কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউন্সিল পর্বে গোপন ভোটে সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে আমার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ও প্রভাব খাটিয়ে পকেট কমিটি গঠনের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বগুড়া-১ আসনের সাংসদ সাহাদারা মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাউন্সিল পর্বে গোপন ভোটে সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে কাউন্সিলরদের গোপন ভোটে আমার ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। কাউন্সিল পর্বে বা তালিকা তৈরিতে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
কাউন্সিলর তালিকায় অনুস্বাক্ষর দেওয়ার কথা স্বীকার করে সাহাদারা মান্নান বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম কামাল হোসেনের নির্দেশে উপজেলার একটি ইউনিয়নের কাউন্সিলর তালিকায় সাক্ষী হিসেবে অনুস্বাক্ষর করেছি। তবে অন্য কোনো তালিকায় আমার স্বাক্ষর নেই।’
সাহাদারা মান্নান আরও বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতাদের নির্বাচন করা হয়েছে। এখন কাউন্সিলর সমর্থনে হেরে এক সপ্তাহ পর কেউ সংবাদ সম্মেলন করতেই পারেন। এর মাধ্যমে তাঁরা আসলে কেন্দ্রের নেতৃত্বকে অসম্মান করছেন।