প্রশংসায় ভাসছে থানায় গিয়ে নিজের বিয়ে ঠেকানো কিশোরী
অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া কিশোরী নুসরাত জাহানের (১৪) জন্য পাত্র ঠিক করেছিল পরিবার। বরপক্ষ মেয়েটির বাড়িতে এসে আংটি পরিয়ে যায়। সে বাল্যবিবাহ না দেওয়ার জন্য মা–বাবাকে অনুরোধ করে। কিন্তু তাঁরা সেই অনুরোধ রাখেননি। উপায় না দেখে নুসরাত থানায় হাজির হয়ে নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধে পুলিশের সহায়তা নেয়। কিশোরীর এমন সাহসী কাজে সবাই তার প্রশংসা করছেন। অনেকেই তার পড়াশোনা চালিয়ে নিতে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলায় গত সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। নুসরাত উপজেলার ওহেদাবাদ গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রহমানের মেয়ে। সে স্থানীয় নূরুন-আলা নূর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী।
মঠবাড়িয়া উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা রূপ কুমার পাল বলেন, ‘নুসরাতের এমন সাহসী কাজের জন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি তাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।’
নুসরাত জাহান বলে, ‘আমি পাঠ্যবইতে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে জেনেছি। আমাদের শিক্ষকেরা ক্লাসে বাল্যবিবাহ না করার জন্য বলতেন। আমার পরিবার যখন আমাকে বাল্যবিবাহ দেওয়ার চেষ্টা করছিল, আমি নিরুপায় হয়ে বিয়ে বন্ধ করতে থানায় যাই। আমি পড়াশোনা শেষ করে বিয়ে করতে চাই। নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করার পর প্রশাসনের কর্মকর্তা ও শিক্ষকেরা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে উৎসাহ দিয়েছেন। এতে আমি খুশি।’
নুসরাতের বাবা আবদুর রহমান বলেন, তিনি দরিদ্র মানুষ। অভাব–অনটনের কারণে তিনি মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। এখন ভুল বুঝতে পেরেছেন। আর নুসরাতের মা রোকসানা বেগম বলেন, অভাবের কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। ভালো পাত্র পাওয়ায় মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন।
নুসরাতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নূরুন-আলা নূর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘নুসরাত যে সাহসী কাজ করেছে, এ জন্য আমি শিক্ষক হিসেবে গর্বিত। সে যদি বিষয়টি আমাকে জানাত, তাহলে আমি বাল্যবিবাহ বন্ধে তার পাশে দাঁড়াতাম। মেয়েটি যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, এ জন্য আমি তার পাশে সব সময় থাকব।’
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, গত সোমবার রাতে ওই কিশোরী থানায় এসে তাকে বাল্যবিবাহ দেওয়ার কথা জানায়। এরপর তার অভিভাবকদের ডেকে বাল্যবিবাহ না দেওয়ার জন্য মুচলেকা নেওয়া হয়। এরপর মেয়েটিকে তার মায়ের জিম্মায় দেওয়া হয়। নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধের জন্য থানায় আসায় মেয়েটিকে পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা বশির আহমেদ আজ বুধবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, নুসরাতের সাহসী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মেয়েটির লেখাপড়ার জন্য অর্থসহায়তাও করা হবে।