পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের সরকারি গাড়িতে হামলা, অভিযোগের নিশানায় যুবলীগ নেতা
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে প্রয়াত দুই আওয়ামী লীগ নেতার নামে মিলাদে পূর্বপরিকল্পনা ছাড়াই যোগ দিয়েছিলেন পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। হঠাৎ মিলাদে তাঁকে দেখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ফুঁসে ওঠে। ফেরার আগে আগে তাঁর সরকারি গাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটে।
আজ মঙ্গলবার বিকেলের ঘটনা এটি। কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া ইউনিয়নের মসূয়া এলাকায় চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের গাড়িতে দুর্বৃত্তরা হামলা করে। হামলার সময় চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম গাড়িতে ছিলেন না। তখন চালক আলাউদ্দিন ভেতরে বসা ছিলেন আর চেয়ারম্যান ছিলেন মিলাদের মঞ্চে। পাকুন্দিয়ার চেয়ারম্যান কেন কটিয়াদীতে এলেন চালককে এই প্রশ্ন করেই হামলা চালান দুর্বৃত্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন চেয়ারম্যানকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন।
রফিকুল ইসলাম পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক। হামলার জন্য তিনি যুবলীগের নেতা-কর্মীদের দায়ী করেন।
আজ যা ঘটল, তা আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। হামলা হয়েছে মসূয়া যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের নেতৃত্বে। এ ঘটনার পর আমি গাড়ি নিয়ে কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপারে কার্যালয়ে বিষয়টি জানিয়ে এসেছি।
এই ঘটনার পেছনে কিশোরগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদের সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুলের বিরোধ নেপথ্য কারণ হিসেবে কাজ করেছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। সূত্রমতে, কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-২ সংসদীয় আসন। রফিকুল পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। দলীয় সমর্থন নিয়ে তিনি এবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। এর আগে আরও এক মেয়াদে চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। এই আসনের সাংসদ নূর মোহাম্মদ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং দলীয় সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করে সাংসদ নির্বাচিত হন। নূর মোহাম্মদ রাজনীতিতে আসার পর থেকে রফিকুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। কিন্তু করোনার শুরুর দিকে সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার নেতৃত্ব নিয়ে সাংসদের সঙ্গে চেয়ারম্যানের দূরত্ব বাড়ে। বর্তমান রফিকুলকে সাংসদের প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবা হয়।
এ অবস্থায় গেল বছরের ৬ আগস্ট রফিকুল চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন। পৌর মেয়র, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও সব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানদের অনাস্থা প্রস্তাবের কারণে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে রফিকুলের বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এসব ঘটনার সূত্র ধরে গেল বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর দলীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে রফিকুল পক্ষের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত এবং যানবাহন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ১৫ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতের রায়ে তিনি স্বপদে বহাল হন।
কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন কটিয়াদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহাব। তিনি কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। প্রয়াত আবদুল ওয়াহাব ও আলাউদ্দিন ভাসানীর নামে আরেকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার জন্য আজ বাদ আসর মসূয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে মসূয়া গ্রামে মিলাদ মাহফিল করা হয়। মিলাদ মাহফিল চলার সময় রফিকুল পাকুন্দিয়ার শাল্লা বাজার থেকে বুরুদিয়া গ্রামে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন দেখতে পান। যখন জানতে পারেন আয়োজনটি হচ্ছে আবদুল ওয়াহাবের জন্য, তখন তিনি গাড়ি থেকে নেমে মিলাদ মাহফিলে অংশ নেন। রফিকুল মিলাদ মাহফিলে অংশ নেওয়ার জন্য মঞ্চে উঠলে পরিস্থিতি তলে তলে উত্তপ্ত হতে থাকে। উপস্থিত অনেকে তাঁকে এই জায়গা থেকে সরে যেতে বলেন। মিলাদ শেষ হওয়ার পর যুবলীগের কয়েক নেতা-কর্মী লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে তাঁর গাড়িতে হামলা করেন। পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে চেয়ারম্যানকে রক্ষা করেন।
আসলে আমাদের আয়োজনে রফিকুল ইসলামকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি। এভাবে যে হঠাৎ আয়োজনে উপস্থিত হবেন, এমনটাও ধারণা করতে পারেননি কেউ। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি।
রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ যা ঘটল, তা আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের ফল। হামলা হয়েছে মসূয়া যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের নেতৃত্বে। এ ঘটনার পর তিনি গাড়ি নিয়ে চলে যান কিশোরগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। সেখানে গিয়ে তিনি পুলিশ সুপারকে বিষয়টি জানিয়ে আসেন। এ ঘটনায় তিনি আইনের আশ্রয় নেবেন বলে জানান।
মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন মসূয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি হামিদুল হক। হামিদুল হক বলেন, ‘আসলে আমাদের আয়োজনে রফিকুল ইসলামকে নিমন্ত্রণ করা হয়নি। এভাবে যে হঠাৎ আয়োজনে উপস্থিত হবেন, এমনটাও ধারণা করতে পারেননি কেউ। ফলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়নি।’
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে চেষ্টা করা হয়। ফোনটি ধরেন একজন নারী। ফোনটি জাকির হোসেনের স্বীকার করলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কেটে দেন।
কটিয়াদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম এ জলিল জানান, ঘটনা জানার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছেন। তবে তাঁর ধারণা ঘটনাটি সাজানো হতে পারে। তদন্তে ভিন্ন কিছু বের হয়ে এলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ছাড় দেবেন না বলে জানান তিনি।