নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে এক নারীকে (৩৭) বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানোর ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বেগমগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোশতাক আহমেদ দুই মামলায় প্রত্যেক আসামির সাত দিন রিমান্ড চান। আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাশফিকুল হক তাঁদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নিশ্চিত করেছেন বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান শেখ।
থানা সূত্র জানায়, নির্যাতনের শিকার নারী বাদী হয়ে বেগমগঞ্জ থানায় গতকাল রোববার রাত পৌনে ১২টার দিকে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি মামলা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে। অন্যটি পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে। দুই মামলাতেই ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭-৮ জনকে আসামি করা হয়।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া আবদুর রহিম ও রহমত উল্লাহকে গ্রেপ্তারের কথা আজ সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ চৌধুরী। এর আগে গতকাল তিনি বলেন, এক মাস আগে ওই নারী নির্যাতনের শিকার হলেও তিনি কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ থানায় কোনো অভিযোগ করেননি। গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরে দুপুরে বিষয়টি তিনি জানতে পারেন। এরপর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত আবদুর রহিমকে বিকেল তিনটার দিকে আটক করা হয়। এরপর রাত সাড়ে ১০টার দিকে রহমত উল্লাহকে (৪১) আটক করা হয়।
এদিকে এই নির্যাতনের ঘটনায় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের কথা আজ দুপুরে নারায়ণগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন র্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম। এর মধ্যে একজন দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ার হোসেন (২৬)। গতকাল দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকা থেকে তাঁকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব জানায়, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী নারীর করা মামলার এজাহারে দেলোয়ারের নাম না থাকলেও আসামিরা সবাই তাঁরই লোক। তাঁরা একত্রে চলাফেলা করেন এবং নানা অপকর্ম করেন। পরে দেলোয়ারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামলার এজাহার নামীয় প্রধান আসামি নূর হোসেন ওরফে বাদলকে (২০) কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে র্যাব।
মামলার এজাহারে ওই নারী উল্লেখ করেন, তাঁর স্বামীকে বেঁধে রেখে আসামিরা তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তাঁরা এ ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণা করেন। গত সেপ্টেম্বর মাসের শুরুর দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নে ঘটনাটি ঘটে। গত এক মাসে তাঁরা এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে তাঁকে অনৈতিক প্রস্তাব দেন। অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাঁরা এই ভিডিও ছেড়ে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই নারীর ১৮ বছর আগে বিয়ে হয়। তাঁর স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় কয়েক বছর আগে তিনি বাপের বাড়িতে চলে আসেন। তাঁর এক ছেলে ও মেয়ে রয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বাড়িতে ওই নারী ছেলে ও এক ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। সম্প্রতি তাঁর স্বামী তাঁর কাছে আসা-যাওয়া করতে শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েকজন যুবক আপত্তি জানিয়ে সেদিন ওই নারীকে নির্যাতন করেন। ঘটনার দিন ওই নারী তাঁর স্বামীর সঙ্গেই ছিলেন। নির্যাতনকারীরা তাঁর স্বামীকেও আটক করে নিয়ে যান। পরে ওই নারীর ভাই ১ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। ওই নারীর মা নেই। বাবাও দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।