কাউন্সিলর মাকছুদুলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা
করোনায় মৃতদের দাফন-সৎকার করে নারায়ণগঞ্জ সিটির আলোচিত কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম ওরফে খোরশেদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন এক নারী। গতকাল রোববার রাতে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাটি হয়। মামলার বাদী সাঈদা আক্তার ওরফে সায়েদা শিউলি (৪০) শহরের ৩২১ নম্বর উত্তর চাষাঢ়া এলাকার মৃত জহিরুল হকের মেয়ে। মামলায় মাকছুদুল ছাড়াও ফেরদৌসি আক্তার রেহানা নামের এক মানবাধিকারকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মাকছুদুল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তিনি নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। মামলায় তিনি ও মানবাধিকারকর্মী ফেরদৌসির বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাদীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো ও আপত্তিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা কাহিনি সাজিয়ে মানহানির অভিযোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলার বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, কাউন্সিলর মাকছুদুল তাঁকে বিয়ে করেছেন।
বাদী সাঈদা আক্তার নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সদস্য। কাউন্সিলর মাকছুদুল তাঁকে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন এই নারী।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে ফতুল্লা মডেল ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশ ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাদী সাঈদা আক্তার নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জ সিএনজি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএর সদস্য। ব্যবসার কাজে প্রায় সময় তাঁকে দেশের বাইরে অবস্থান করতে হয়। বিবাদী মাকছুদুলের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছেলেবেলা থেকে। সাঈদার আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সেখানে ছাড়াছাড়ি হয়। সে ঘরে তিন সন্তান রয়েছে তাঁর। পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে মাকছুদুল তাঁকে বিভিন্ন সময় বিয়ের প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি না হলে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান এবং বিয়ের প্রস্তাব দিতে থাকেন। মাকসুদুল বিবাহিত। তা সত্ত্বেও ২০২০ সালের ২ আগস্ট কাঁচপুরের এস এস ফিলিং স্টেশনে মাকছুদুল নিজেই কাজি নিয়ে এসে পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে তাঁকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি ও মাকছুদুল বিভিন্ন স্থানে একসঙ্গে রাত্রি যাপন করেন।
বিয়ের খবর মাকসুদুলের পরিবারে জানাজানি হলে মাকছুদুল সাঈদার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এ অবস্থায় সাইদা ব্যবসায়িক কাজে দুবাই চলে গেলে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল মাকছুদুল তাঁর স্ত্রী আফরোজা আক্তার লুনাকে সঙ্গে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে সাঈদার বিরুদ্ধে আপত্তিকর, মানহানিমূলক তথ্য উপস্থাপন করেন এবং নানা বাজে মন্তব্য করে কুৎসা রটান। ২৫ এপ্রিল ফেরদৌসি আক্তার রেহানা ওরফে রেহানা মুসকান নামের ওই মানবাধিকারকর্মী মাকছুদুলের বাসায় বসে লাইভে এসে সাঈদাকে ‘রাস্তার মেয়েদের’ সঙ্গে তুলনা করে আপত্তিকর কথাবার্তা বলেন এবং তাঁর চুল কেটে দেওয়ার হুমকি দেন। দুবাই থেকে বিষয়টি সাঈদা জানতে পারেন এবং ফেসবুক লাইভের ভিডিও দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হন। তিনি বর্তমানে দেশে ফিরে এসেছেন এবং বর্তমানে দেশেই অবস্থান করছেন।
মামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে কাউন্সিলর মাকছুদুলের মুঠোফোনে একাধিকাবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
গত ২৪ এপ্রিল ফেসবুক লাইভে এসে কাউন্সিলর মাকছুদুল ও তাঁর স্ত্রী আফরোজা আক্তার লুনা মামলার বাদী সাইদা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, সাঈদাই কাজি নিয়ে এসে বিয়ে করার জন্য মাকছুদুলকে বাড়ি থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মাকছুদুলকে প্রশাসনিকভাবে নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে লাইভে তিনি দাবি করেন। ওই ঘটনার দুই দিন পর ওই সাঈদা ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, তিনি ব্যবসায়িক কাজে দেশের বাইরে আছেন। মাকছুদুল তাঁকে বিয়ে করেছেন। তাঁর কাছে প্রমাণ আছে। মাকছুদুল বিষয়টি গোপন করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও মানহানিকর অভিযোগ করেছেন।