বিশ্ব আবহাওয়া দিবস
নাতিশীতোষ্ণ পঞ্চগড় এখন পর্যটক টানছে
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পঞ্চগড়ে বছরের অর্ধেক সময় শীত অনুভূত হয়। গরমের মৌসুমেও এই জেলায় তাপমাত্রা থাকে সহনীয় পর্যায়ে।
মিল রয়েছে দার্জিলিংয়ের আবহাওয়ার সঙ্গে।
শরতে আকাশ থাকে পরিষ্কার, দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
গ্রীষ্মে উষ্ণ বাতাস হিমালয়ের বাধায় বৃষ্টি হয়ে ঝরে পঞ্চগড়ে।
দেশের সবচেয়ে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের আবহাওয়া এখন পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম অনুষঙ্গ। হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই জেলার আবহাওয়া পর্যটকদের কাছে দিন দিন উপভোগ্য হয়ে উঠছে। ষড়্ঋতুর এই দেশে পঞ্চগড়ের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বছরের অর্ধেক সময়ই অনুভূত হয় শীত। গরমের মৌসুমেও এই জেলার তাপমাত্রা থাকে অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে।
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার আবহাওয়ার সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে ভারতের দার্জিলিংয়ের আবহাওয়ার। শীত মৌসুমে দেশের বেশির ভাগ সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করে জেলার তেঁতুলিয়ায়। এর আগে ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় দেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে গত শীত মৌসুমে তেঁতুলিয়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমেছিল।
গ্রীষ্ম মৌসুমেও এই জেলার তাপমাত্রা বেশ সহনীয় পর্যায়েই থাকে বলে দাবি করছেন আবহাওয়াবিদেরা। গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার আবহাওয়ার চেয়ে পঞ্চগড়ের আবহাওয়া কিছুটা ভিন্ন। গরমের সময় রাজশাহী, যশোর, সীতাকুণ্ড ও টেকনাফ এলাকায় যেমন দাবদাহের সৃষ্টি হয়, পঞ্চগড়ে তেমন হয় না। সমতল ভূমির চা–বাগানসহ নানা প্রজাতির গাছপালা থাকায় এখানে পরিমিত বৃষ্টিপাত হয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই বললেই চলে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া বাংলাদেশ ভূগোল সমিতিরও সদস্য। তিনি বলেন, জেলার অবস্থান হিমালয়ের পাদদেশে হওয়ায় শীত মৌসুমে সাইবেরিয়া থেকে আসা বাতাস হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে সরাসরি পঞ্চগড়ের দিকে চলে আসে। আবার গ্রীষ্ম মৌসুমে দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের উষ্ণ বাতাস হিমালয়ে গিয়ে ধাক্কা খেয়ে জলীয় বাষ্পের সৃষ্টি করে। পরে বৃষ্টিপাত হয়। এ জন্য অনেক সময়ই ভারতের দার্জিলিংয়ের বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়ার সঙ্গে পঞ্চগড়ের অনেকটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
এদিকে ভূগর্ভে পাথর থাকায় এই জেলার পানি অত্যন্ত ঠান্ডা ও সুস্বাদু। শরৎ ও হেমন্তকালে আকাশ পরিষ্কার থাকলে জেলা শহরসহ তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দেখা মেলে হিমালয়ের পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘার। ওই সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতেই পর্যটকদের ভিড় জমে পঞ্চগড়ে।
পঞ্চগড় পর্যটন উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি হাসনুর রশিদ বলেন, ছায়া সুনিবিড় পঞ্চগড় জেলার আবহাওয়া অবশ্যই পর্যটকদের টানে। শত ব্যস্ততার জীবনে দেশের সবচেয়ে উত্তরের এই প্রবেশদ্বারে যেকোনো মানুষ এসে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় প্রশান্তি খুঁজে পাবেন।