মাহমুদুল হাসানের বয়স চার বছর। বাবা শাকের আলী (৩৫) ও মা আমেনা বেগমের (২৮) সঙ্গে বৃহস্পতিবার থেকে বন্যার কারণে সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। তাদের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার নীলগাঁও গ্রামে।
পানি বেড়ে যাওয়ায় যানবাহন চালানো বন্ধ শাকের আলীর। স্ত্রী আমেনা বেগম ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আশ্রয়কেন্দ্রে রান্না করার তেমন ব্যবস্থা নেই। রান্না করলেও মাহমুদুল কিছু খেতে পারে না। কেবল দুধ হলে ভালো খেতে পারে সে। বন্যার মধ্যে রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শাকের আলী। তিনি বলেন, শুধু শুকনা খাবার খেয়ে তাঁর ছেলের মুখ অনেকটা শুকিয়ে গেছে।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে সোমবার বিকেল চারটায় প্রথম আলো ট্রাস্টের সহযোগিতায় সিলেট প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নেওয়া ১৫০ শিশুর হাতে তুলে দিয়েছেন শিশুখাদ্যসামগ্রী। এর মধ্যে ছিল দুটি মিনি হরলিক্সের প্যাকেট, গ্লুকোজের দুটি প্যাকেট, লেক্সাস বিস্কুটের দুটি প্যাকেট, এনার্জি প্লাস বিস্কুটের দুটি প্যাকেট, এক প্যাকেট কোকোনাট বিস্কুট, আধা কেজি ওজনের গুঁড়া দুধের প্যাকেট, দুটি খাওয়ার স্যালাইন, চার প্যাকেট মিনি কেক, এক কেজি সুজি ও দুটি সাবান। এসব পেয়ে শিশুরা বেশ খুশি।
মাহমুদুলের বাবা শাকের আলী বলেন, এগুলো দিয়ে অন্তত এক সপ্তাহ ছেলেকে খাওয়াতে পারবেন।
সানজিদা আক্তার ও সুমাইয়া আক্তার নামের চার বছরের দুই যমজ বোনকে খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত দেখা গেল। আশ্রয়কেন্দ্রের ঠাঁই নেওয়া ৮ বছরের শিশু কয়েস আহমদ ও ১৫ বছরের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এখলাস আহমদও বেশ খুশি। এই দুজনের বাবা ট্রাকশ্রমিক আবদুল কাদির বলেন, ‘বড় ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন হওয়ায় ছোট থেকে সাদা ভাতের সঙ্গে দুধ ও চিনি দিয়ে খাবার খাওয়াতাম। এখনো এভাবেই চলে। কিন্তু বন্যার কারণে এখন দুধ আনা তো দূরের কথা, চাল-ডালও ঠিকমতো আনতে পারি না। কয়েক দিন ধরে ভাতের সঙ্গে চিনি দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে এখলাসকে। এখন প্যাকেট গুঁড়া দুধ পেয়ে মনে শান্তি লাগছে। ছেলে এখন সপ্তাহখানেক দুধভাত খেতে পারবে।’
শিশুখাদ্যের প্যাকেট বিতরণের আগে বক্তৃতা করেন বাদাঘাট মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আহমদ আলী ও পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল বাশার। এ সময় তাঁরা শিশুদের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে এবং খাবারের আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন। বন্যার মধ্যে রোগবালাই থেকে কীভাবে সুরক্ষা থাকা যায়, সে বিষয়ে শিশুদের অভিভাবকদের সচেতন করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো সিলেট বন্ধুসভার সভাপতি হুমাইরা জাকিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মিহরাব আহমেদ চৌধুরী, বইমেলা সম্পাদক রাহুল রাজনাথ, পাঠচক্র সম্পাদক দৃষ্টি বর্মণ, ম্যাগাজিন সম্পাদক গায়ত্রী বর্মণ, মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক শ্রেয়ান ঘোষ প্রমুখ।
অনুদান
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ১১ লাখ টাকা প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি বিকাশের মাধ্যমে প্রায় ৩০ হাজার টাকা অনুদান পাঠিয়েছেন।
বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় আপনিও এগিয়ে আসতে পারেন। সহায়তা পাঠানো যাবে ব্যাংক ও বিকাশের মাধ্যমে। হিসাবের নাম: প্রথম আলো ট্রাস্ট/ ত্রাণ তহবিল, হিসাব নম্বর: ২০৭২০০১১১৯৪, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড, কারওয়ান বাজার শাখা, ঢাকা। অথবা বিকাশে পেমেন্ট করতে পারেন: ০১৭১৩০৬৭৫৭৬ এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে। এ ছাড়া বিকাশ অ্যাপের ডোনেশানের মাধ্যমেও আপনার সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।