পটুয়াখালী মেডিকেল
দালালদের উৎপাত, রোগীদের ভোগান্তি
বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে দালাল এবং ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উৎপাত বেড়েছে। এতে রোগীরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন
দেড় বছরের শিশু মোহাম্মদ ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছে। শিশুটিকে নিয়ে তার ফুফু ফুলনেছা বেগম এসেছেন পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বহির্বিভাগের চিকিৎসক শিশুটিকে দেখে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেন। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে বের হওয়ার পর ফুলনেছাকে কয়েক ব্যক্তি ঘিরে ধরেন। তাঁরা ব্যবস্থাপত্র দেখে শিশুটিকে নিয়ে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলেন।
পটুয়াখালী শহরের চরপাড়া এলাকার আয়ুব আলী (৪০) চর্মরোগের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগে এসেছেন। চিকিৎসকের কাছ থেকে ব্যবস্থাপত্র নেওয়ার পর তাঁকেও একইভাবে কয়েকজন এসে কীভাবে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করবেন, তার পরামর্শ দিচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার সকালে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ চিত্র দেখা যায়। ফুলনেছা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ওই লোকগুলো তাঁকে জানিয়েছেন, তাঁদের পরিচিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সেখানে গেলে ভালোভাবে পরীক্ষা হবে।
তবে গতকাল ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁরা দ্রুত হাসপাতাল থেকে চলে যান। রোগী ও রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাসপাতালে দালালের উৎপাত রয়েছে। ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের ভিড় বেড়েছে। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে ভাড়া বেশি আদায় করা হয়।
এসব কারণে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আবদুল মতিন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দিয়েছেন তিনি।
গত ২৭ আগস্ট পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে দালাল এবং ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের উৎপাত বেড়েছে। এতে রোগীরা বিভিন্নভাবে প্রতারিত হচ্ছেন এবং হাসপাতালে আসা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। রোগীরা যেমন হাসপাতালের কাঙ্ক্ষিত মানের সেবা পাচ্ছেন না, তেমনি সরকারও রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এর আগে হাসপাতালে দালাল রোধকল্পে বিভিন্ন স্থানে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড টাঙানোর পরও বিন্দুমাত্র কাজ হয়নি। এতে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের সংগঠন ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া) পটুয়াখালী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. লিমন বলেন, ‘হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের চিঠির বিষয়টি শুনেছি। সংগঠনের পক্ষ থেকে সভা করে এ ব্যাপারে করণীয় উদ্যোগ নেব। নির্ধারিত সময় ছাড়া ওষুধ কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি হাসপাতাল ভিজিট করেন না।’
হাসপাতালের বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিক সমিতির সভাপতি নেছার উদ্দিন হাওলাদার বলেন, তাঁদের সমিতির আওতায় ২৪টি বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। আর হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে দুটি। করোনাকালে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্সগুলো দিনরাত রোগী বহন করেছে। ভাড়া একটু বেশি হলেও রোগীরা জরুরি সেবা পেতে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিচ্ছেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন বলেন, হাসপাতালের ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তাঁদেরই দেখতে হবে। তারপরও যখন বিষয়টি নিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।